পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
নরওয়ে ভ্রমণ

আসিয়াছিল, তাহারই একটা দখল করিয়া বসিলাম। বস্তুবিশেষের নূতনত্বের একটা মোহ আছে ত? পারে গিয়া দুই চার পা চলিতেই সেই পোড়া বাড়ীগুলির ভগ্নাবশেষ দেখিতে পাইলাম। আহা! বড় হৃদয়বিদারক দৃশ্য! কেহ বা বসিয়া, তাদের সাধের দ্রব্যজাতের দশা দেখিয়া চক্ষের জলে বক্ষ জাসাইতেছে, কেহ বা তাহা হইতে দুই একটা আস্ত অংশ বাহির করিয়া অবশিষ্ট ভাগের জন্য তন্ন তন্ন করিয়া তল্লাস করিতেছে। সকলেরই মুখ মলিন, সকলেরই হৃদয় ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। কেবল অবোধ শিশুর দলে আজ আর আনন্দের সীমা নাই, আজ আর তাদের ঘরে আটক থাকিতে হইবে না, জানিয়া তাহারা খেলায় মত্ত। কিন্তু খেলিতে খেলিতে যখন ক্ষুধায় অস্থির হইয়া, দৌড়িয়া গিয়া, মা বোন্‌কে তাড়না করিতেছিল, আর তারা তখন কিছু দিতে না পারিয়া, সজল নয়নে শিশুদের মুখের দিকে চাহিতেছিল, তখন এ করুণ দৈন্যের দৃশ্য বড়ই অসহ্য হওয়ায় দর্শকবৃন্দ সকলেই কিছু না কিছু দিতে বাধ্য হইল।

 এই ফিয়ডের আশে পাশে হাঁটিতে হাঁটিতে বহুদূর চলিয়া গেলাম। কত কৃষকের স্ত্রী-পুত্র-পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। সকলেই ক্ষণকালের জন্য আপন আপন কার্য্য ছাড়িয়া, আমাদের দিকে সকৌতুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে লাগিল। বড় ইচ্ছা হইয়াছিল, ইহাদিগের সহিত কিছু বাক্যালাপ করি। ভ্রূবিলাস-অনভিজ্ঞ অমার্জ্জিত সরলপ্রাণের সুখদুঃখের কথা কিছু শুনিয়া যাই। পরের মুখে ঠিক তেমনটি শোনা হয় না। কিন্তু ভাষা জানা না থাকাতে বিদেশের ব্যবধান এতটুকুও ঘুচাইতে পারিলাম না, এই বড় দুঃখ, সকল সময়েই মনকে পীড়িত করিতেছিল। বাক্‌শক্তি সত্ত্বেও ইহাদের কাছে বোবা বনিয়াই আছি। এদেশের পর্ব্বত-বিশেষের স্তরে স্তরে বিস্তর শ্লেট (Slate) প্রস্তর পাওয়া যায়। তাহা যন্ত্রদ্বারা বাহির করিয়া, নানা আকারে কাটিয়া, বিবিধ বর্ণে চিত্রিত করিয়া, দালানের ছাদ, কি মেজের কারুকার্য্যে ব্যবহার করে। ইহাতে বাড়ীর শ্রী বহু পরিমাণে বৃদ্ধি করে। এ কার্য্যে যুবা-বৃদ্ধ বিস্তর লোক নিযুক্ত দেখিলাম।

 তারপর পাহাড়ের উপরের জঙ্গল আবাদ করিবার ইহাদের একটা নূতন কায়দা দেখিলাম। পথে চলিতে চলিতে হঠাৎ চাহিয়া দেখি, অনুমান ৫।৭ শত ফিট উপরে, জায়গায় জায়গায় পাহাড়ের গায়ের গাছপালাগুলি কেমন বিনা বাতাসেই নড়িতেছে। প্রথমে কিছু বুঝিতে না পারিয়া কেবল হাঁ করিয়া চাহিয়া রহিলাম। তার পর দেখি কি, একটা মোটা তারের মধ্যে দিয়া ২।৪ আঁটি, কাটা লতাপাতা ডালপালা