পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
৫৩
নরওয়ে ভ্রমণ
৫৩

বুঝিলাম যে, বিনা দোষে এদের উপর অবিচার করা হইতেছি, পাওয়া গেল, তা আদৎ চায়ের দেশের অধিবাসিগণের গলাধঃকরণ কর। . তাদের একটু ভাল ভাল চায়ের আস্বাদ রাখাই অভ্যাস। যাক সে দুঃ এ স্থান হইতে চিরবিদায়-গ্রহণের আগে সে বৃহৎ ভবনের চিত্রপট সকল না দে আসা গেল না। নরউইর্জীন চিত্রকরেরা কলাবিদ্যায় পারদর্শী বটে! যেমন সুন্দর বর্ণবিন্যাস, তেমন তাদের লিখনও চমৎকার দেখিলাম। আর অভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যেরও এখানে অভাব নাই; কাজেই এ সবের চিত্ৰই বেশী ছিল। মনােনিবেশপূর্বক ইছামত সময়, ইহাতে অতিবাহিত করি, আমাদের সে যে ছিল না। বংশীর ক্রমাগত আমাদিগকে কূল ছাড়িয়া অকূলে ভাসিতে আদেশ করিতেছে। এ ডাক শােনা না শােনা নিজেদের ইচ্ছাধীন নয়। এখানে বেতনভােগী হুকুমের দাসের হুকুম, না শুনিলে দণ্ডভােগ আছে। সেও আবার যে সে দণ্ড নয়, আমাদের পক্ষে প্রায় আমানে বাস গেছ। তখন প্রাণের দায়ে ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া বসিলাম। এক ভরসা যে, আমরা কাল কয়জন একে বারে “Hall Mark” কর।——হরাইলেই খানাতল্লাস হইবেই হইবে। সুতরাং কাপ্তেন সাহেব জানিয়া শুনিয়া নিৰ্ম্মমের মত ফেলিয়া যাইবে না নিশ্চয়। বিশেষ এত দূরদেশ হইতে আসিয়াছি বলিয়া আমাদের প্রতি তার খাতিরও ছিল যথেষ্ট। নিয়ম ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত আধ ঘণ্টার বেশী কাহারও জন্য কর্ণধার অপেক্ষা করিবেন না, আমরা তার আগেই আসিয়া পেীছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই তরী খুলিয়া দিল।

 ক্রমে আবার শৈলশিখরসমন্বিত, ফিয়ডের একাধিপত্য ছাড়াইয়া, সেই অসীম অতল নীলসিন্ধুর জলে আসিয়া পড়িলাম। তখন সেই স্বচ্ছ সলিলে আপনার সসীমরূপ প্রতিফলিত দেখিয়া, যেন লজ্জা পাইয়া প্রকৃতিসুন্দরী অদৃশ্য হইয়া গেলেন। সীমার সুশোভন সাজ বেশ, অসীমের বিরাট মূর্তির কাছে কেমন খেলো দেখায়। অনন্ত আকাশ আর অতল জলধির তুলনায় সকলি যে ক্ষুদ্র হইতেও ক্ষুদ্রতর এ অভিজ্ঞতা জন্মে। তখন সকল রূপােন্মত্ততায় অবসাদ আসে। কিন্তু স্বভাবতঃ যিনি চাতুৰ্য্যময়ী, তিনি কি আর বেশীক্ষণ অন্তরালে থাকিতে পারেন? যেই দেখিলেন যে, ভাস্কর সেই প্রশান্ত সমুদ্রবক্ষে আপনার মুখচ্ছবি প্রতিবিম্বিত করিয়া, দিগণকে আনন্দে মাতাইয়া তুলিতেছেন, অমনি কোথা হইতে অলক্ষিতে একখণ্ড মেঘ আসিয়া, সেই সমুজ্জ্বল মুখের উপর ফেলিয়া তাহা ঢাকিয়া দিলেন। আর প্রভাকরের প্রণয়িনীগণ তৎক্ষণাৎ বিরহ-ব্যথায়