পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
৫৪
নরওয়ে ভ্রমণ
৫৪

লন; পরক্ষণেই করুণার পরবশ হইয়া সে আবরণ উন্মােচন লকে হাসাইলেন। আবার কি মনে করিয়া, ইঙ্গিতে সমীরণকে মৃদুমন্দে বারিধিবক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গতঙ্গ সৃষ্টি কয়িয়া, দিনমণির কনককান্তি ছিন্নবিচ্ছিন্ন এয়া দিতে আদেশ করিলেন। প্রভঞ্চনও অচিৎ দেবীর আজ্ঞা প্রতিপালনে তৎপর হইলেন। এইরূপে ক্ষণে দর্শন ক্ষণে অদর্শনে, দিণ্ডলকে অভিভূত করিয়া দিনের পালা সাঙ্গ করিলেন। তারপর সন্ধ্যাকে টানিয়া আনিয়া, এতদিন পরে নিশাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাইলেন, কিন্তু নিশার পতি-দেবতা চুপে চুপে আসিয়া পশ্চাতে দাড়াইতেই সন্ধ্যা সরমে সরিয়া পড়িলেন। ইয়্যবসরে দেবী তারকার মালা গাঁধিয়া বিলাসী নিশাপতির আনমিত গলদেশে অর্পণ করিয়া সকৌতুকে ঈর্ষান্বিতা বিভাবরীকে পরিহাস করিয়া বলিতে লাগিলেন

“নবিনা বিপ্রলম্ভন সম্ভোগঃ অষ্টিতে
কষায়তে হি বাদৌ ভূয়া জাগো বিবর্ধতে।”

 আমরা প্রকৃতি আর পুরুষের এই চির মাধুৰ্য্যময় প্রণয়াভিনয় দেখিতে দেখিতে, সেই এক ঘেয়ে জলে-জঙ্গাকার ভাবটা ভুলিয়া থাকিতাম।

 পরদিন আমরা রাজধানী খিস্তিয়ানার সম্মুখীন হইতেই আমাদের জাহাজে Royal Flag উড়াইয়া দিল। সে দিন কাপ্তেন সাহেব আমাদিগকে জাহাজের কিছু কলকারখানা দেখাইবেন বলিয়া প্রতিশ্রুত হইলেন। কেন না বিদেশী বলিয়া আমাদের প্রতি তার বিশেষ যত্ন, সে কথা আগেই বলিয়াছি। তিনি চতুর্থ ডেকে একখানা ঘেরা-দেওয়া ছোট কুটরীতে আমাদিগকে লইয়া গেলেন। তথায় গিয়া দেখি, এক প্রকাণ্ড কম্পাস যন্ত্রের সাহায্যে দি-নির্ণয় করিয়া, একখানা চাকা এদিক ওদিক ঘুরাইয়া, সেই বৃহৎ জলধানের প্রান্তদেশস্থিত হলকে নিয়মিত করিতেছে। যে ব্যক্তির উপর ইহার চালনার ভার, তাহার আর অন্যদিকে দৃকপাত করিবার যে নাই। তবে প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর নূতন লােক আসিয়া ইহাকে অব্যাহতি দেয়, এরূপ ব্যবস্থা রহিয়াছে। সেখানে একখানা টেবিলের উপরে যে মানচিত্র দেখিলাম, তাহাতে জাহাখানার গমনের পথ নির্ণীত করা আছে, এবং সে পথের দুই পাশের জলের গভীরতার পরিমাণ লেখা রহিয়াছে। তদনুসারে গতির বেগ কম বেশী করা হইতেছে। আমাদের সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধিতে এ সকল দুরূহ সামুদ্রিক তত্ত্ব কিছুই আয়ত্ত করিতে না পারিয়া, কেবল কৌতুহলৰিস্ফারিতনেত্রে চাহিয়া দেখিতে লাগিলাম। তারপর যাহা দেখাইলেন, তাহা