পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৫৫

আরও বিস্ময়জনক। রঙ্-বেরঙের নিশান উড়াইয়া, ভিন্ন ভিন্ন জাহাজের কর্ম্মচারীদের সহিত কিরূপে রীতিমত কথাবার্ত্তা চালান যায়, তাহার নমুনাস্বরূপ একখানা মোটা পুস্তক বাহির করিলেন। তাহাতে প্রত্যেক দেশের রাজকীয় পতাকার বিশেষ বিশেষ বর্ণ ও নমুনা লিখিত আছে, এবং সেই বর্ণানুসারে নাকি প্রশ্নোত্তর চলে। এই সকল হরেক রকমের চিত্র দেখিতে দেখিতে, হঠাৎ “ইণ্ডিয়ার” পতাকার দিকে নজর গেল। সেই চিরপরিচিত ধ্বজ! গ্রেটব্রীটনের সঙ্গে একীভূত হইয়া আছে, কোন পার্থক্য নাই। জন্মাবধি ইহা দেখিয়া আসিয়াছি। তবু আজ কেমন চোখে একটু ধাঁধা লাগাইল। প্রত্যেক পতাকার বিভিন্ন আকার দেখিয়া সহসা এ অভিন্নতা কেমন যেন একটু খাপ ছাড়া বোধ হইল। আর কলকারখানা দেখার দিকে মন গেল না। এরপর যা দেখিলাম, সে কেবল বাহিরের চক্ষে। সব দেখা শেষ হইলে, নাবিক মহাশয়কে যথোচিত ধন্যবাদ দিয়া নীচে নামিয়া আসিলাম। ততক্ষণে রাজধানী নিকটবর্ত্তী হইয়াছে। দূর হইতেই দেবতার হাত ছাড়াইয়া এখানে মানুষের হাতের নিদর্শন সব প্রত্যক্ষ করিতে লাগিলাম। অভ্রভেদী সৌধ-চূড়া সকল, যেন নভোমণ্ডলকে খণ্ড বিখণ্ড করিয়া দিয়া দাঁড়াইয়া আছে। তথাকার বৃহৎ বন্দরে আসিয়া নোঙ্গর করিবামাত্র, অনেক দিন পরে আবার সেই ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, গাড়ীঘোড়া এবং জনতা দেখিয়া প্রাণের এতদিনকার উদার প্রফুল্ল ভাবটা যেন হারাইয়া ফেলিলাম। বাইরেও কলরব। ভিতরেও মহাগোলযোগ বাঁধিয়া গেল। আমরা যদিও রাজধানীরই লোক বটে, তবু সে রাজধানীর তুলনায় এর সবই অন্য রকম লাগিতে লাগিল। এদের রাজাও ফরসা প্রজাও ফরসা; রাজারও যে মাতৃ-ভাষা, প্রজার ও সে ভাষা। এক স্থানেই দুইএর জন্ম, দুইএর একই ধর্ম্ম, বিবাহদি ক্রিয়াকর্ম্ম, এক প্রণালীতেই সম্পন্ন হইয়া থাকে। তারপর দেহান্তে সম্রাটের দেহের যে গতি, তাঁহার অধীন জনেরও সেই বিধি!

 এ দেশের চিরন্তন প্রধানুসারে উষার মুখ কেহ বড় একটা দেখে না, দেখিতে পায় না। পাছে ঊষার নব উন্মেষিত মোহন মধুর রূপের ছটায় কেহ সজাগ হইয়া পড়ে, সেই ভয়ে যেন নিদ্রাদেবী আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকে আগ্‌লাইয়া বসিয়া থাকেন। দিবাকর নিদ্রাদেবীর এই অনধিকার চর্চ্চায় রোষান্বিত হইয়া আপনার রশ্মিজাল বিস্তারপূর্ব্বক সেই নিরাশ্রয়া মুগ্ধা বালিকাকে সস্নেহে তন্মধ্যে রক্ষা করিয়া, নিদ্রাদেবীকে অন্তর্ধান হইতে আদেশ করেন। তখন চৈতন্য লাভ করিয়া, পুরুষরমণী অভেদে দিনমানের