পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
নরওয়ে ভ্রমণ

জন্য, সেই বিপুল কর্ম্মক্ষেত্রে যে যার ছুট্ দেয়। আমাদের দেশে কিন্তু এতটা ছুটাছুটি দেখি না, সব রয়ে সয়ে হয়। এখানে পিতা, পুত্র, ভাই, ভগিনী, স্বামী, স্ত্রী, শত্রু, মিত্র, কে কার আগে যাবে, প্রাণপণ এই চেষ্টা—সর্ব্বত্র এক লক্ষ্য—পদবৃদ্ধি। এই পদ অনুসারেই মান-সম্মান! নইলে কেহ কাহাকেও পোছে না। এ সব স্বাধীন রাজ্যে জাতিবিচার নাই বটে, এই পদবিচারই বা কম কিসে?

 আজ প্রথমেই আমাদিগকে টুরিষ্ট হোটেলে যাইয়া সে স্থান হইতে নগরটির সমগ্র দৃশ্য নিরীক্ষণ করিতে হইবে, আমাদের প্রতি কুক্ কোম্পানীর এই আদেশ জারী হইল; পরে নামিয়া, লেণ্ডো গাড়ীতে চড়িয়া, কিছু গিয়া নির্দ্ধারিত এক ট্রেম গাড়ীর নিকট উপস্থিত হওয়া এবং ইহারই সাহায্যে এক পাহাড়ের পাদদেশে আগমন করিয়া, পদব্রজে সে পর্ব্বতের সানুস্থিত পান্থশালায় পৌঁছান। এখানেও আমাদের সঙ্গে এক পরিবারের সহিত সাক্ষাৎ জন্য পরিচয়-পত্র ছিল। গাড়োয়ানকে সে বাড়ীর কর্ত্তার আফিসের ঠিকানা বলতে, আমাদিগকে সেখানে নিয়া উপস্থিত করিল এবং কার্ড পাঠাইবা মাত্র তিনি স্বয়ং আসিয়া আমাদের গাড়ীর সম্মুখে দাঁড়াইলেন। জানি না, কি মনে করিয়া তাঁর মুখে আর হাসি ধরে না। একেবারে দুই হস্ত বাড়াইয়া আমাদিগকে অভ্যর্থনা করিলেন। এবং স্বেচ্ছাক্রমে আমার ভ্রাতার পার্শে উপবেশন করিয়া অশ্বচালককে অগ্রসর হইতে আদেশ করিলেন। তাহার অমায়িক ব্যবহারে মনে হইতে লাগিল, যেন কতদিনকার পরিচয়। নরওয়েজীনদের মত আগন্তুকদের প্রতি এমন সরল স্বাভাবিক ব্যবহার সচরাচর সভ্যদেশে দেখা যায় না। কুক্ কোম্পানী কর্ত্তৃক নির্দিষ্ট ট্রেমের নিকটে আসিতেই আমাদের গাড়ীগুলি থামিল। আমরাও সকলে নামিয়া সেই বৈদ্যুতিক শকটের অভ্যন্তরে অধিষ্ঠান লাভ করিলাম। লণ্ডনে আসিবার আগে আর কখনও ট্রেমে চড়া ভাগ্যে ঘটে নাই। সর্ব্বসাধারণের সঙ্গে একত্র বসিয়া সদর রাস্তায় এ ভাবে যাতায়াত, বঙ্গমহিলার পক্ষে এক অভিনব ব্যাপার বলিতেই হইবে। কাজেই প্রথম প্রথম কেমন একটু বাধে-বাধো ঠেকিত। কিন্তু এতদিন এই সব পাশ্চাত্য সভ্য দেশের সংস্রবে সে বাধোবাধো ভাবটা এখন বিলুপ্তপ্রায়। মানুষ এমনি অভ্যাসের দাস। আমরা তখন দুইতিনখানা ট্রেমগাড়ী বোঝাই হইয়া চলিলাম। সব সহযাত্রী এভাবে একত্র বসিয়া যাওয়ার একটা বেশ আমোদ আছে। ক্রমে সহর ছাড়াইয়া বাইরে আসিতেই আবার পাহাড়ের পাট আরম্ভ হইল। এবারে একটি পাহাড়ের পদতলে আসিয়া আমাদের ট্রেম থামিল। নামিয়া