পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
নরওয়ে ভ্রমণ

সরলতাই এদের জীবন! বিস্ত‍‌ৃতিই এদের ধর্ম্ম। যখন এসব ফুরাইয়া যায়, তখন আপনার ধ্বংস প্রার্থনা করে, নবীনকে স্থান দিবে বলিয়া। এ কি নিঃস্বার্থপরতা। আমাদের এসব শুধু দেখাই সার! আর ভাবাই কর্ম্ম! গ্রহণের ক্ষমতা রাখি না— উপায়ও জানি না।

 দেখিতে দেখিতে এক বৃহৎ হ্রদের সম্মুখে আসিয়া পড়িলাম। কত লোেক ছোট ছোট নৌকায় তাহা পার হইতেছে। সময় সংকীর্ণ জানিয়া, আমাদের মনের ইচ্ছা মনেই রহিয়া গেল। আমাদের নবপরিচিতা গিন্নিমাতা তখন আমাদিগকে তাঁহার বাড়ী গিয়া চা-পান করিতে অনুরোধ করিলেন। আমরাও সাদরে সে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিলাম। এ ভদ্রতাটুকু হইতে তাঁকে বঞ্চিত করা উচিত মনে করিলাম না। স্থ‌ুলাঙ্গিনীগণ স্বভাবতঃই প্রায়শঃ প্রফুল্লচিত্ত হইয়া থাকেন; পরম কারুণিক সৃষ্টিকর্ত্তার অনাদিকাল হইতেই এই বিধান চলিয়া আসিয়াছে। নয় ত সৌখীন মানবচক্ষু যে কিসে কি করিয়া বসিত, বলা যায় না। হোটেল হইতে সেই প্রবীণার বাড়ী পৌঁছিতে আমাদের যেন মুহূর্তমাত্র জ্ঞান হইল, তিনি আমাদের দলবলকে এমনি জমাইয়া রাখিয়াছিলেন। বাড়ীটির যেমন বাহির সুন্দর, তেমনি ভিতরটি মনোহর! কথায় কথায় জানিলাম, এটি তাঁদের নিজস্বমত বাটী এবং এ বাড়ীর মালিক এ দেশের একজন সমৃদ্ধিশালী কাষ্ঠব্যবসায়ী বণিক। যে পাইন ফরেষ্ট দেখিয়া আসিলাম, সে বৃক্ষের জন্য নরওয়ে বিখ্যাত। এখানকার ভাগ্যলক্ষী নাকি ইহারি আশ্রয়ে বাস করেন, আর তাঁর বসতি—মৎস্যজীবীদের গৃহে শুনিলাম। “সেমন” নামক মৎস্যে নাকি তিনি বিশেষ অনুরক্ত। মন্দ নয়! মৎস্যের যে পূতিগন্ধে, প্রেতযোনিরা পর্যন্ত পলায়ন করে, কমলবাসিনী হইয়া তিনি যে কেমন করিয়া সতত তাহা নাসারন্ধে ধারণ করেন, আমরা ক্ষুদ্র বঙ্গবাসী, এ রহস্য কেমনে বুঝিব? বেশীক্ষণ সে গৃহে থাকা হইল না, কারণ কর্ত্তা এবং কর্ত্ত‌ৃঠাকুরাণীর দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন অন্যত্র রাত্রি ভোজনের (dinner) নিমন্ত্রণ ছিল; বলিলেন, আগন্তুক ছাড়িয়া এভাবে চলিয়া যাওয়ায় অভদ্রাচরণের জন্য তাঁহারা উভয়েই বড় লজ্জিত ও দুঃখিত হইলেন। সেই বিল্ না চুকান ভিন্ন, আর তাঁহাদের অভ্যর্থনার কোনরূপ ক্রটী পাইলাম না। দিন থাকিতেই তাঁরা রাত্রি-ভোজনের নিয়মিত বেশ পরিধান পূর্ব্বক আমাদের নিকট বিদায় গ্রহণেচ্ছু হইলেন; এবং এই অসময়ে এহেন কেশ-ধারণের কারণ বিশেষ করিয়া এই বলিলেন যে, বৎসরের বেশীর ভাগ তাঁহাদিগকে রাত্রির অন্ধকার লইয়াই থাকিতে হয় বলিয়া ডিনার