পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৬১

ব্যাপারটা তাঁরা বিকালের মধ্যেই সারিয়া ফেলার নিয়ম করিয়াছেন। বৎসর-ভরা একই নিয়ম চলে তাতেই এই কটা মাস তাঁদের সময়োচিত পরিচ্ছদ ব্যবহার হইয়া উঠে না। অতএব যেন তাঁহারা আমাদের নিকট হাস্যাস্পদ না হন, সেজন্য আগেই ইহা বলিয়া রাখিতে বাধ্য হইলেন। আমরা কিন্তু এই সামান্য বিষয় লইয়া, এতটা করিবার কিছু আবশ্যক দেখিলাম না। সময়ভেদে আহারের পরিতৃপ্তির সঙ্গে, অঙ্গের পরিচ্ছদের পরিবর্ত্তনের যে কি সম্বন্ধ তাহা ত আমরা বুঝি না। কোন কালে বুঝিব কি না কে জানে! বিদায়কালে কন্যার উপর আমাদের চা-পানের তদারকের ভার দিয়া গেলেন।

 সে সুভ্র, তদ্দেশীয় রুচি অনুসারে মহা খাতিরজমা যে, তাঁর মত সুলোচনার ঈপ্সত সঙ্গ ছাড়িয়া, সহঞ্জে কেহ যাইতে চাহিবে না। কিন্তু দেশ ও কাল ভেদে যে রুচির পার্থক্য হইয়া থাকে, সে বেচারা ত আর তা জানেন না। তিনি তার সুমিষ্ট গলায় দুই একটি গান করিলেন, তাঁর চিত্র-বিদ্যার বহু নিদর্শন দেখাইলেন, শিল্পকলায় যে তিনি সিদ্ধহস্তা, তাহার প্রমাণ সকল আমাদের সম্মুখে আনিয়া ধরিলেন। প্রকৃতই মেয়েটি যে সব গুণসমম্বিতা, তাহা বলিতেই হইবে। ইংরাজীতে যাকে বলে “Accomplished”—তাই। এ সকল ছাড়াও তাঁর চরিত্রগত একটা সহজসুন্দর বৈচিত্র ছিল, যাতে আমাদের সকল ভেদবিচার ভুলাইয়া দিল। খুসী মনে তাঁকে ছাড়িয়া যাইতে আর পারিলাম কৈ? তাঁহার স্বহস্তে মিশ্রিত, অতি উপাদেয় কফি পান করিয়া, আমরা পরম তৃপ্তিলাভ করিলাম। যাত্রার সময় স্বাগত জানিয়া গাত্রোখান করিবামাত্র আমাদিগকে আর কিছুক্ষণ বসিতে অনুরোধ করিলেন। কোনদিন জর্ম্মানিতে গিয়া তাঁহার আপন অলয়ে আতিথ্য স্বীকার করিতে নিমন্ত্রণ করিলেন। তাঁহার স্বামীও শিরঃকম্পনে তাহার সম্পূর্ণ অনুমোদন করিয়া, আমাদিগকে বন্ধুত্বসূত্রে আবদ্ধ করিতে চাহিলেন। তাঁহাদিগের যুগল শিষ্টাচারে বলিতে কি, আমরা যেন অভিভূত হইয়া পড়িলাম, আর ভাবিলাম, এত যারা খাতির জানে, তাদের সেই বিল হেন ব্যাপারে অতটুকু গলদ রাখার তাৎপর্যটা কি হইতে পারে? অথবা “অল্পস্য হেতোঃ বহু হাতুম্” ইচ্ছায়, বিচারমূঢ়তা মাত্র প্রকাশ পায়। যাক্ তারপর ধন্যবাদাদি শিষ্টাচার-বিধি পালন করিয়া, সময়ের স্বল্পতা জ্ঞাপনাস্তর, সহযাত্রীদের উদ্দেশ্যে বাহিরে আসিয়া, নির্দিষ্ট ট্রেনের নিকট দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। সকলে সমবেত হইলে গাড়ী ছাড়িয়া দিল। সেই দম্পতি গবাক্ষ-দ্বার হইতে রুমাল উড়াইয়া, আমাদিগের দৃষ্টি