পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৬৩

এই কালের রঙ ধরাইয়াছে। বস্তুতঃই তবে উহা প্রাচীন। কিন্তু সে স্থানে পৌঁছিয়া যা দেখিলাম, তাতে উহা প্রাচীন কীর্ত্তির উপযুক্ত বলিয়া মনে হইল না। আমাদের ভারতবর্ষের প্রাচীন কীর্ত্তির সকলের মধ্যে, কত শত কারুকার্য্য আজও স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে! কৈ! কালের ধ্বংসকুশলী হস্ত ত দুই চার হাজার বৎসরেও তাহা পুঁছিয়া ফেলিতে পারে নাই! সে সকল এম‍্নি পাকা হাতের কারিগরি! আর একি। একখানা কাঠের তৈয়ারি খেলাঘর! না আছে তার কোন নৈপুণ্য, না আছে তাতে বৈচিত্রা!

 যদি বল, শুধু কালের মাহাত্ম্যই কি কম? তা নয়। কিন্তু যদি সে মহাত্মা কেবল অনুমান-সাক্ষেপ হয়! তবে? ধন্য পাশ্চাত্য জাতি! যে কোন তত্ত্ব প্রাচীন বলিয়া একবার কাণে গেলেই তাহারা তাহাতে শ্রদ্ধাবান্ হইয়া পড়ে। তার প্রমাণ স্বরূপ আমাদের চক্ষে এই নগণ্য গৃহটির, কেহ কেমেরা লইয়া কেহ বা Sketch book বাহির করিয়া তুলিকা সহযোগে প্রতিকৃতি তুলিয়া লইতে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। আমরা তখন কুক্ কোম্পানীর উদ্দেশ্যে মাতৃভাষার আশ্রয়ে কিছু কটু কথা ব্যয় করিয়া মনের ক্ষোভ মিটাইয়াছিলাম। সত্য কথা বলিতে কি, আর রাজধানী ভাল লাগিতেছে না। কিন্তু পরাধীন জনের ত আত্ম-ইচ্ছায় কার্য্য করা চলে না। সে দিন ম্লান মুখে ঘরে ফিরিলাম, কেন না আজকার কেবল যাতায়াতের পরিশ্রমই সার হইল। কাল নাকি বড় বড় Museum আর Art Gallery দেখান হইবে। ইচ্ছা ছিল না যে যাই, কিন্তু পাছে বাঙ্গালী নারী জাতির “অবলা” নামের সার্থকতা প্রমাণীকৃত হয়, সেই লজ্জার খাতিরেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও সহযাত্রিগণের সঙ্গ লইতে বাধ্য হইলাম।

 প্রথমেই এক প্রকাণ্ড যাদুঘরে প্রবেশ করিতে হইল। সেখানে মোটেই মন বসিল না। গাইড্ মহোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার পদাঙ্ক অনুসরণ ভিন্ন শরীরের অন্য কোন কার্য্য ছিল না। চোখের দৃষ্টি ত কোন্ রাজ্যে যে অপসারিত হইয়াছিল তা নিজেই জানি না। বিদেশী বেচারা তাহা দেখিয়া, তার ভাঙ্গা ইংরেজীকে একটু ঘোরান-গোছ করিয়া, একটু বড় গলায় বক্ত‌ৃতা করিতে কৃতসংকল্প হইল, কিন্তু কর্ণ তাতে আদপে আমল দিল না। তারপর “আর্ট গেলেরীতে গিয়া আর বেশী কি দেখিব! লণ্ডনে ত আর্টের চুড়ান্ত দেখা হইয়াছে,” মনে এই অবসাদ আসিল। কিন্তু যখন আসিয়াছি, তখন দেখাই যাউক, এই বলিয়া একটু অলসগমনে চলিলাম। দূর হইতে যেই মর্ম্মরপ্রস্তরমূর্ত্তি সকলে নয়ন নিপতিত হইয়াছে, অমনি চরণদ্বয় চঞ্চল হইয়া উঠিল,