পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
নরওয়ে ভ্রমণ।

সবই যেন শিশুদের খেলার উপযোগী উপকরণ বলিয়া ভ্রম হইতেছিল। আচ্ছা! এ সব ত বেশ দেখা গেল, কিন্তু শয়নের সরঞ্জামের ত কোনই সন্ধান পাইতেছি না! ভাবিলাম, অবশ্যই স্বতন্ত্র কামরা আছে। কিন্তু এ হেন কল্পনার আশ্রয়ে আমাদিগকে অধিকক্ষণ থাকিতে হইল না। সেই স্থবিরা স্মিতমুখে, একখানি পত্রপুষ্পপরিশোভিত পরদা, দেয়ালের গাত্র হইতে উত্তোলনপূর্ব্বক এক অভিনব দৃশ্য দেখাইলেন। বস্তুতঃ এ দৃশ্য এ জন্মে আর দেখিব বলিয়া মনে হয় না। ইহাকে শয়নাগার না বলিয়া শয্যাবিভ্রাট বলাই বেশী সঙ্গত হইবে, বোধ হয়। একটি প্রাচীরসংলগ্ন আলমারীর থাকে থাকে চারিটি প্রাণীর শয্যা পাতা রহিয়াছে, এবং দর্শকবৃন্দের বিশ্বাস বদ্ধমূল করিবার জন্য, ইহার প্রত্যেকটিতে এক একটি শিশু শোওয়াইয়া রাখা হইয়াছে। কোথাও একটি ছিদ্রও নাই যে, তাহা দ্বারা বাহিরের নির্মল বায়ু প্রবেশ করিয়া, অভ্যন্তরের দূষিত বায়ুকে বহির্গত করিয়া দিবে। বলা বাহুল্য যে, সেই লোচনগ্রাহিণী নিদ্রাদেবীর এস্থলে দয়ার এই অযাচিত পক্ষপাতিতা দেখিয়া, আমরা কিঞ্চিৎ ঈর্ষান্বিত হইয়াছিলাম। আমাদের এত সাধ্যসাধনায়ও তাঁর মন পাওয়া যায় না কেন? আমরা ‘নিশিভোর’ দ্বার বিমুক্ত রাখিয়া একান্তে তাঁর নিঃশব্দ পদসঞ্চার প্রতীক্ষা করিয়া থাকি; কিন্তু তিনি অনেক সময়ই তাহা উপেক্ষা করিয়া, অকারণ আমাদের দেহমনের নিপীড়ন করিতে ছাড়েন না! আর এরা এই প্রকৃরূপে আবদ্ধ একটি ক্ষুদ্রতম প্রকোষ্ঠে, গাত্র ঢালিবামাত্রই তিনি যে নেত্র জুড়িয়া বসিয়া, পরম মিত্রবৎ আচরণ করেন! —ইহাকে পক্ষপাতিতা ভিন্ন আর কি বলা যাইতে পারে বল?

 এই অবস্থা দেখিতেই আমাদের প্রাণ-বায়ু যেন রুদ্ধ হইয়া আছে, অথচ এদের তাতে ভ্র‌ূক্ষেপও নাই। জানি, জন্মাবধি এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতে হইলে, আমাদেরও ইহা অভ্যস্ত হইয়া যাইত, সন্দেহ নাই। এইরূপ ভিন্ন ভিন্ন দেশের দৃশ্য-বৈচিত্রের সঙ্গে সঙ্গে, তত্রনিবাসীদিগের আচরণপদ্ধতির পার্থক্য দেখিয়া, ক্ষুদ্র প্রাণও যে কি পরিমাণে প্রসারতা লাভ করে, ভাবিলে আশ্চর্যবোধ হয়। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া সৃষ্টিকর্তার নব নব সৃজনী-শক্তি প্রত্যক্ষ করিয়া, অন্তরে যে এক অভূতপূর্ব্ব আনন্দের উদ্রেক হয়, ইহাই দেশ-পর্যটনের স্থায়ী ফল মনে করি। এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে আনমনে আরও দুই চারিটি কুটীরের ভিতর-বাহির প্রদক্ষিণ করিতেছি, এমন সময় তত্ত্বাবখায়ক স্মরণ করাইয়া দিলেন যে, আমরা এ স্থানের সাময়িক পরিদর্শক মাত্র; —আমরা তাঁহার পদাঙ্ক অনুসরণপূর্ব্বক প্রত্যাবর্তনে তৎপর হইলাম। তখন কুটীরবাসীদিগের