“এ তোমাদের জুলুম! যাই বল, নিজ চক্ষের দেখা নয় যখন, তখন শপথ করিয়া বলি কেমন করে, বল দেখি।” আমরা শিষ্টাচারের অনুরোধে, সে সমাধিতেই হেমলেটের নশ্বর দেহের অবশেষ আছে মনে করিয়া লইতে চেষ্টা করিলাম। সত্য কথা বলিতে কি, মৃতদেহের নামে এ নষ্টামি কিন্তু আমাদের দেশের লোকের কল্পনায়ও আসে না। সত্যপরায়ণ সভ্যদেশেরই এ সব সাজে। আজিকার দেখার পালা এখানেই শেষ হইল। আমরা একটু ক্ষুন্ন মনেই বাসভবনে ফিরিয়া আসিলাম। শহরের মধ্য দিয়া যাইতে যাইতে যা কিছু নয়নাভিরাম সমুদায়ই দেখিলাম।
জাহাজে আজ কদিন ধরিয়া, একটি বর্ষীয়সী রমণী আমার সঙ্গ লইয়াছেন —কি মনে করিয়া তা বলিতে পারি না। আমি যেখানে যাই, তিনি নির্ণিমেষ-নেত্রে আমায় নিরীক্ষণ করেন। সহসা একদিন একেবারে সম্মুখে আসিয়া, আমার হাতখানি ধরিয়া বলিলেন-“যদি কিছু মনে না কর, তবে তোমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা কইতে চাই।” “অভার্থ নৈব ইয়ং তে প্রার্থনা মন্যে” বলিতে গিয়া ত বাক্যজড়তায় আমি একেবারে গলদ্ঘর্ম্ম হইলাম। তিনি প্রথমেই বলিলেন যে, তিনি অল্পদিন হইল, স্বামি-বিয়োগে একটু চঞ্চল হইয়া, দেশভ্রমণে বাহির হইয়াছেন। এ অবস্থায় তাঁর হীরা-মুক্তায় জড়িত বেশভূষা দেখেই ত আমার চোখ্ দুটো বিগ্ড়ে গেল। তবে মুখখানি করুণরস মিশ্রিত দেখিয়া, কতকটা আশ্বস্ত হইলাম। ইংরাজীতে যাকে বলে, Eccentric: হাবভাবে আমার তাই মনে হইল। আমার আপাদমস্তক শুভ্র বস্ত্রে আবৃত দেখিয়া, আমাকে কুমারী সম্বোধন করিতেই আমি তৎক্ষণাৎ তাহা সংশোধন করিয়া দিয়া, আমাদের দেশাচারের কথা উল্লেখ করলাম।
তখন তিনি সসম্ভ্রমে বলিলেন, “আমায় তবে তুমি নিশ্চয়ই একটা বিলাসপ্রিয় স্ত্রীলোক ভাবছ, কেমন? আমার একটা ভারি দোষ যে, আমি সমাজের নিয়মের গণ্ডীর মধ্যে কখনও থাকতে ভালবাসি না; তাই দেখ না, আমি কাল পোষাক পরি নাই। এতে লোকে আমাকে বড় নিন্দা করে, আমার তাতে বড় আনন্দ হয়। আমাদের জাতিটাকে আর আমাদের ধর্ম্মটাকে, আমি দস্তুর মত ঘৃণা করি। তুমি শুনলে আশ্চর্যান্বিত হবে যে, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না!” আমাদের দেশে নাস্তিক নারী নাই বলিলেই হয়, তাই তাঁহার এই কথা শুনিয়া আমার একটু কেমন কেমন লাগল। তবে ব্যক্তিবিশেষের বিশেষত্বের একটা আকর্ষণ আছে ত? কথাবার্ত্তায় বুঝিলাম, ইনি উচ্চ-কুলোদ্ভবা, সুশিক্ষিতা; তবে এই গলদটুকু ইঁহাতে আছে কেন? যাক্, আমি