পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ।
৮৫

কোম্পানিই দায়ী, বলিতে হইবে। যদি তাঁহারা, দুই একটা গির্জা দেখান বাদ দিয়া, তৎপরিবর্ত্তে সেই সকল কলকারখানা দেখিবার ব্যবস্থা করিয়া রাখিতেন, তবে আমরাও তফাৎ হইতে যীশুকে উদ্দেশ করিয়া, তাঁহাকে আমাদের অন্তরের ভক্তি জানাইয়া, অনেক উৎপাত হইতে অব্যাহতি লাভ করিতাম। এই ঔষধ-গেলা-গোছ গির্জ্জা দেখায় আমাদের বস্তুতঃই বড় অরুচি ধরিয়াছে। আমাদের দেশের দেবালয়ের অবধি নাই; কিন্তু তাহার প্রায় প্রত্যেকটিতে বিভিন্নরূপ বিগ্রহ প্রতিষ্টিত থাকায়, পর্য্যাটকের পক্ষে কৌতূহলপ্রদ হয়। যে দেশে নারীজাতির এত খাতির, সে দেশে দেবীপ্রতিমার পূজা নাই!—এ বড় আশ্চর্য্যের বিষয়। একই নরমূর্ত্তি দেখিতে দেখিতে, আমাদের নয়নে আয়াস আসে; যদিও প্রকৃত জীবনে আমাদের আচরণ সম্পূর্ণ বিপরীত হইয়া থাকে।

 দুই দিনের পর, আজ এই রাজস্থান হইতে বিদায় গ্রহণ। তখন প্রণত পারাবার আবার দুইদিন তার আতিথ্যস্বীকার করিতে আমাদিগকে অনুরোধ করিলেন এবং আমাদিগের চালক “তথাস্তু” বলিয়া আমাদিগের শরণ-সহ তাঁহার শরণাগত হইলেন! যাঁহারাই জাহাজে কিছু দিনের পথ যাতায়াত করিয়াছেন, তাঁহারাই লক্ষ্য করিয়া থাকিবেন যে, এ পুণ্যপুরীতে প্রায়শঃ বহুবিধ প্রণয়-প্রসঙ্গ সম্ভাবিত হইয়া থাকে। তাহার কারণ এই যে, তদুপযোগী স্থান ও জন ইহাতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। শুনিয়াছি, সন্তানের শুভকামনায় অনেক পিতামাতা, বয়স্থা দুহিতাদিগকে এস্থানে প্রেরণপূর্ব্বক ভাবি ফলাফলে আশ্বস্ত হন। তবে বয়সনির্ব্বশেষে ধৈয্যবিলোপী কুসুমায়ুধ অনেক সময়েই অস্থানে শরসন্ধান করিয়া অকারণ অন্তার্জালার সূত্রপাত করেন। আমাদিগের এ প্রবাসে আসা অবধি, প্রতিদিন কত হৃদয় সমর্পণ, গ্রহণ, হারানো কুড়ানো, কত কি হইতে লাগিল। কখনও এক রাঙ্গা পায় দশটা মাপা লুটাপুটি যায়, তবুও মন পাওয়া দায়। আবার যেখানেই বয়সটা দোটানা-গোছের হইয়াছে, জীবনস্রোতে ভাটা লাগিয়াছে, সেখানেই প্রায় ‘খামাখা গৌরাঙ্গ মোরে রাখ তব পায়’ চলিয়াছে। মোটকথা, এ প্রহসনে নিতান্ত অন্তদন্তহীন “Wrinkled piece of womanhood” না-হইলে, কোন অঙ্গনাই দর্শকদলভুক্ত হইয়া থাকিতে চান না। এক্ষেত্রে অভিনেত্রী হইবারই অভিলাষ বেশী। এরা প্রেম জিনিষটাকে এত হাল‍্কা করিয়া ফেলিয়াছে যে, যে-সে, যখন-তখন, যা-তা, প্রেম-সঙ্গীত গাহিতে কোনরূপ দ্বিধা বোধ করে না। আমাদের, ভারপ্রধান দেশের লোকের চোখে কিন্তু এসব বড় ঠেকে!