পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
নরওয়ে ভ্রমণ।

কিসে, কে কি ভাবিয়া বসে, সেই তরাসেই তারা সুখের চেয়ে শোয়াস্তি ভালবাসে। স্বভাবতঃ নির্ভীক বলিয়া, এসব দেশের রমণীগণ কিছুতেই প্রায় স্ত্রী-বিজিতা হন না; সুতরাং, তাঁরা মানেরও ধার বড় ধারেন না। ইহা তাঁহাদের পুরুষদের পক্ষে সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য, আমরা তার বিচারক নই। তারপর এ প্রবাসে প্রেম-পত্রের যা ছড়াছড়ি, তার আর বিশদ ব্যাখ্যা কিবা করি! জাহাজে কাহারও কোন জিনিষ হারাইলে একটা নোটিসে “Lost” এবং তার স্বরূপ লিখিয়া, সিড়ির সম্মুখে দেওয়ালের গায়ে টাঙ্গাইয়া রাখিবার রীতি। হঠাৎ একদিন সেখানে হাসির ধুম পড়িয়া গেল। ব্যাপারখানা জানিবার জন্য নিকটে গিয়া দেখি, লেখা আছে “Lot! One heart last night in the dance,—360 beats in a minute!” এবংবিধ রঙ্গ তামাসা নিত্যই এখানে হইয়া থাকে। অর্থাৎ, জলপথের এই দীর্ঘ দিন কটা আমোদে কাটান লইয়া কথা। কিন্তু এই আমোদজনক বিষয় যদি আসলে গিয়া পরিণত হয়, তখন তাহা শোভনীয় কি শোচনীয় হয়, বলা শক্ত। ভাবিয়া দেখিলে, সুরা-সুন্দরীর সেবায়, আর কন্দর্প দেবের ভজনায়, অবস্থা উভয়তঃ সমানই গিয়া দাঁড়ায়।

 এই সব ভাবিতেছি, এমন সময় কে পরিচিতের মত আমার কাঁধে ভর করিয়া, পিছনে আসিয়া দাঁড়াইল। মুখ ফিরাইয়া দেখি, আমার সেই সদ্যঃপরিচিত সুলোচনা। জিজ্ঞাসা করিলাম—“সেই-যে সেদিন তোমার দেখা পাই নাই কেন?” ঈষৎ হাস্য করিয়া সে বলিল—“আপনাকে আব‍্ডাল করিয়া রাখিয়াছিলাম, এই বাহ্য প্রকৃতিটা আমাকে মাঝে মাঝে বড় জব্দ করে। যখন বড়-ঝাপ্টা, আমার বুকের ভিতর যেন কি চেপে ধরে!—আমি তখন কেবল কাঁদি—কেবল কাঁদি। যে দিন গুমট্ ভাব দেখি— সে দিন আর আমার মুখ দিয়া কথা সরে না, যেন জীবনে মৃতের মত থাকি। উজ্জ্বল সূর্যালোকে আমি যেন প্রাণ পাই; বড় ধুম করিয়া পোষাক পরি গহনা গায়ে দিই, বড় আনন্দ মনে হাসি, গাই, খাই, দাই। ইহার এই অদ্ভ‌ুত জীবনরহস্য আমাকে বড়ই কৌহতূলী করিল। মনে মনে ইহার আসঙ্গ-লিপ্সা বাড়িতে লাগিল। বিশ্রব্ধ সৌম্যভাবে প্রণোদিত হইয়া প্রশ্ন করিলাম—“তুমি সে দিন বল্লে, তোমার স্বামীর উইলের টাকা তুমি ছোঁও নাই, তবে কি করলে?” সে বলিল—“তুমি শুনলে কি করবে, জানি না; আমি তার সবটা তোমরা যাদের বড় ঘৃণার চক্ষে দেখ, তাদের দিয়ে দিয়েছি। তারি মধ্যে দু-চারজন সে টাকায় আপনাদের ঘরবাড়ী করে, পরের দুয়ারে খেটে খেয়েদেয়ে আছে। কেউ কেউ তা দিয়ে ভাল লেখাপড়া শিখ‍্ছে, আবার কেউ কেউ,