পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
নরওয়ে ভ্রমণ।

 পরদিন প্রত্যুষে, ঘন ঘন ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে জাগ্রত হইয়া উঠিলাম। নিশ্চয়ই নিবিড় কুজ‍্ঝটিকার কুহেলিকায় পড়িয়াছি ভাবিয়া, প্রাণটা কাঁপিয়া উঠিল। Port holeএর পরদা সরাইয়া দেখি, দিগ‍দিগন্ত যেন ধূমজালে আবৃত! ডাহিনে-বামে, সম্মুখে পশ্চাতে কিছুই লক্ষ্য হইতেছে না; অথচ অগ্রসর হওয়া চাই।

 তবে কি এই মান-বিবর্জ্জিত, অবগুণ্ঠনে অপরিচিত দেশে, মাধুর্য্যলীলার এক অভিনব অনাস্বাদিত রসের সঞ্চার করাইবেন বলিয়া দিগ্বধূগণ মিলিয়া এ চক্রান্ত করিয়াছেন! মানের উছিলায় একেবারে “বদনন-কমল ঝেঁপে বসা”! কিন্তু এ বংশীধর ত আর “স্ত্রীণামাদ্যং প্রণয়বচনং বিভ্রমো হি প্রিয়েষু”র বার্তা জানেন না। কেবল বাঁশরী বাজাইলেই হয় না, সেই মনভুলান বাজানো জানা চাই। কাজেই অবগুণ্ঠনও অপসারিত হইতেছে না দেখিয়া ত, ইনি, এক ভয়ঙ্কর বিপদ গননা করিয়া, আতঙ্কে একেবারে দিগিবিদিক্ জ্ঞানহারা হইলেন। তবে কি আজ অপঘাত মৃত্যু? একা হইতেন ক্ষতি ছিল না, কিন্তু, তার শরণাগত জনকেও যে, তৎসঙ্গে এই লবণাম্বুরাশিতে হাবুডুবু খাইয়া, লবণাক্ত শরীরে লয় পাইতে হইবে! কৌতুকময়ীরা কি করুণাবশে একবার তাহা চিন্তা করিয়া দেখিয়াছেন? যে দেশে যে রসের অনুভূতি নাই, তাকে তা পাওয়াইতে যাওয়া কেন ভাই? বুঝি বা এ অনুনয়ে কাজ দেখিল! তখন যথার্থই তাঁহাদের এই ললিত-বিভ্রম ব্যর্থবোধে, ধীরে ধীরে আপনাদের অভেদ্য আবরণ উন্মোচন করিতে লাগিলেন। সকল উৎকণ্ঠার উপশম হইল। সকলেই গা-ঝাড়া দিয়া, দ্বিগুণ উৎসাহে এই প্রমোদভবনের উৎসব আনন্দে উপভোগের নিমিত্ত প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। আজ নাকি সারা দিন প্রহসন চলিবে,—বিজ্ঞাপন দেওয়া হইল। আর এ জলপথে বিদেশে-যাত্রার দিন ফুরাইয়া আসিল। অতএব এখানকার সমগ্র লীলাবিধির এক সংস্মরণীয় স্মৃতি সঙ্গে লইয়া, তবে ত আপন আপন দেশে ফিরা। তাই আমোদপ্রিয়-জাতটা বাকি দিন ক’টা, প্রাণভরে আশ মিটায়ে হেসেখেলে নিতে চায়। আমরা সবটাতে যোগ দিতে পারিতাম না,—এও আমাদের ধাতের দোষ। নোটিসের আর-আর-সব বাদ দিয়া, বৈকালের “Variety Entertainment” দেখিতে বসিব, ঠিক করিলাম। কে কি করিবে, তার একখানা তালিকা হাতে করিয়া দেখিতে লাগিলাম। আমাদের সঙ্গে এক বেহারী বন্ধু ছিলেন, খোসগল্প বক্তার মধ্যে তাঁহার নাম রহিয়াছে। ছাতুখোরের দেশের লোক হইলেও, সম্ভ‌্রান্ত-বংশের সন্তান বলিয়া আর-আর দশজনের মতই, ইনি সুশিক্ষিত ও সম্মাননীয় ছিলেন।