পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
নরওয়ে ভ্রমণ

নাই, তাহাতে লাভ কি লোকসান গণিব বলা কঠিন। ততঃপর আহার আরম্ভ। বুঝিলাম এ জাতটা রসনার ভজনা জানে বটে! আমাদেরি জুড়ী! পরিবেশনের প্রণালী দেখিয়া তারিফ না করিয়া পারিলাম না। দেখিলাম খণ্ড বরফ হইতে খুদিয়া বাটী বানাইয়া তন্মধ্যে Straw-berry ফল রাখা হইয়াছে, এবং চিনি দ্বারা কৃত্রিম তুষার প্রস্তুত করিয়া সুস্নিগ্ধ ননীর উপর স্থাপিত করা হইয়াছে। এমন নয়ন রঞ্জন বস্তু নট করিয়া রসনার তৃপ্তি সাধন করিতে কেমন দ্বিধা বোধ হইল। কিন্তু আমাদিগের নিমন্ত্রিকার নির্ব্বন্ধাতিশয়ে চক্ষুর দোহাই গ্রাহ্য করা গেল না। প্রায় দুই ঘণ্টা কাল এইরূপ বহুবিধ আহার্য্য বস্তুর সদগতি করাইয়া গাত্রোত্থান করিলাম। এবারে অতিথিদিগের অজ্ঞাতসারে, এমনি সুকৌশলে বিল চুকাবো ব্যাপার সমাধা হইয়া গেল যে, তৎসম্বন্ধীয় বেতনভোগী ভৃত্যগণের সদাচারে সন্তুষ্ট হইয়া যে তাহাদিগকে কিঞ্চিৎ দক্ষিণা দিয়া যাইব এমন সুযোগও মিলিল না। তাই ভাবিলাম যে সুচতুর কর্ত্রীদিগের কার্য্যদক্ষতা সর্ব্বত্রই সমান! এবারে এক অভিনয় দর্শন করিতে গেলাম, কিন্তু ভাষার ব্যুহ ভেদ করিতে না পারিয়া, কিঞ্চিৎকাল নেত্র ও কর্ণের বিবাদ ভঞ্জনে অতিবাহিত করিয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলাম। পথে এক Concert roomএ গিয়া বসিলাম। আমাদিগের নবপরিচিতার অতিথি সৎকারে মুগ্ধ হইয়া গেলাম। তিনি যে কখন আমাদিগের জন্য এত আয়োজন করিয়া রাখিয়াছিলেন বোঝা গেল না। এখানকার শ্রুতিমধুর বাদন বড়ই চিত্তাকর্ষক হইয়াছিল। অন্যূন ষাট সত্তর জন একত্রে মিলিয়া বিভিন্ন যন্ত্র বাজাইতেছিল। এখানে এক অভিনব ব্যাপার দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইলাম। তিন চারি শত লোক একই প্রকারের পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া, দর্শকমণ্ডলীর সহিত বিচ্ছিন্ন ভাবে বসিয়া, একই সময়ে করতালি দ্বারা বাদকদিগের উৎসাহবর্দ্ধন করিতেছে। জিজ্ঞাসায় জানিলাম ইহারা বেতনভোগী ভৃত্য। দর্শকের সংখ্যা বাড়াইবার জন্য ইহাদিগকে নিযুক্ত করা হইয়াছে এবং কোন্ কোন্ সময়ে করতালি আবশ্যক হইবে তাহাও পূর্ব্বেই অভ্যাস করান গিয়াছে। ইহাদের বেতনে কোম্পানীর যে অর্থ ব্যয়িত হয় তাহার চর্তুগুণ উপসত্ত রহিয়া যায়; কেননা যে দলের দর্শকের সংখ্যা যত অধিক, তাহার খ্যাতি ততই চতুর্দ্দিকে বিস্ত‌ৃত হইয়া পড়ে। সহসা কেহ ইহাদিগকে চিনিতেও পারে না। পাশ্চাত্য সভ্যদেশের অধিকাংশ স্থলেই নাকি এ প্রথা প্রচলিত আছে। সভ্যতার এবম্বিধ ব্যবসায়িক চাতুর্য্য লক্ষ্য করিয়া আমরা ব্যবসায়-বুদ্ধি-বিরহিতেরা যেন হতভম্ব হইয়া যাই।