পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২) নানা চৰ্চা শব্দটিই তোমরা স্কুলঘরে বেশিবার শুনেছি, অতএব তোমাদের কাছে বেশি পরিচিত। অপরপক্ষে “উত্তমাশা অন্তরীপ” বললে আমরা ভাবতে বসে যাই, জিনিষটা কি ? আর ততক্ষণ চিন্তার দায় থেকে অব্যাহতি পাইনে, যতক্ষণ না কেউ বলে দেয় যে, ও হচ্ছে Cape of Good Hope এর বাঙ্গলা নাম। আর শৃঙ্গ অন্তরীপ (Cape Horn) শুনলে তা আমরা অগাধ জলে পড়ি । আর সে জলে পড়লে আর উদ্ধার নেই, কারণ সে জল বরফ জল । আমাদের পরিভাষার দশা যখন এরূপ মারাত্মক, তখন আমি যতদূর সম্ভব পরিভাষা পরিত্যাগ করে আমার কথা ভাষায় বলতে চেষ্টা করব । যেখানে অগত্যা পরিভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হব, সেখানে ইংরাজী শব্দই ব্যবহার করব। এ প্ৰস্তাব শুনে, আমার হাতে বাঙলা ভাষার জাত মারা যাবে ভেবে তোমরা ভীত হয়ে না। ইংরাজী বিজ্ঞানের পরিভাষাও ইংরাজী নয়—গ্ৰীক । আর গ্রীক সভ্যতার বয়েস আড়াই হাজার বৎসর । সুতরাং তার স্পর্শে আমাদের ভাষার আভিজাত্য একেবারে নষ্ট হবে না । ভারতবর্ষের সভ্যতার সঙ্গে গ্ৰীক সভ্যতার আর কোনও বিষয়ে মিল না থাকুক, বয়েসে মিল আছে।

ভূমণ্ডল প্ৰথমেই আমি তোমাদের কাছে পৃথিবী নামক গোলকটির কিঞ্চিৎ পরিচয় দেব। এ গোলকটি ক্ষিতি আর অপ, মাটি আর জল এই দুই ভূতে গড়া। আর এ গোলকের চার ভাগের তিন ভাগ হচ্ছে জল, আর এক ভাগ স্থল ।