পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb নানা চৰ্চা তবে জিজ্ঞাসা করি, একজন বাঙলা-লেখকের কাছ থেকে তুমি আর কোন পেটুয়ািটজমের প্রত্যাশা করি ? আমি যে ইংরাজী লিখি নে তার থেকেই বোঝা উচিত যে অ-বঙ্গ পেটিয়টিজম আমার মনের উপর একাধিপত্য করে না । যে ভাষা ভারতবর্ষের কোন দেশেরই ভাষা নয়, সেই ভাষাকে সমগ্ৰ ভারতবর্যের ভাষা গণ্য ক’রে সেই ভাষাতে পেটিয়ািটক বক্তৃতা করতে হলে, আমি সেই পেটুয়ািটজমের বাহানা করতে বাধ্য হতুমি যে, দেশগ্ৰীতি ভারতবর্ষের কোন দেশের প্রতি ভালবাসা নয়, কিন্তু সমগ্ৰ ভারতবর্ষের প্রতি প্রীতি। মুখস্থ ভাষায় শুধু মুখস্থ ভােবই প্রকাশ করা যায়। তার প্ৰমাণ আমাদের কনফারেন্স-কংগ্ৰেসে নিত্যই পাওয়া যায়, দেশের যত মুখস্থবাগীশ-ও-সকল সভার তারাই হচ্ছেন যুগপৎ নায়ক ও গায়ক । সে যাই হোৰু, কোনরূপ ভালবাসার কৈফিয়ৎ চাওয়ায় যেমন অন্যায়, দেওয়াও তেমনি শক্ত, তা সে অনুরাগের পাত্ৰ ব্যক্তিবিশেষই হোক, জাতিবিশেষই হোক। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে, আমরা যাকে স্বদেশপ্রীতি বলি আসলে তা স্বজাতি-প্রীতি। দেশকে ভালবাসার অর্থ দেশবাসীকে ভালবাসা —কেননা মানুষে শুধু মানুষকেই ভালবাসে। যদি এমন কেউ থাকেন। যিনি মানুষকে নয় মাটিকে ভালবাসেন, তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তিনি মানুষ নন-জড়পদার্থ, কেন না জড়ের প্রতি জড়ের যে একটা নৈসৰ্গিক ও অন্ধ আকর্ষণ আছে, এ সত্য বিজ্ঞানে আবিষ্কার করেছে। যাৰু ও সব অবান্তর কথা। আসল কথা এই যে, স্বজাতি-প্রীতির কৈফিয়ৎ কারে কাছে চাওয়া অন্যায়, কারণ ও হচ্ছে মনের একটা দুর্বলতা। স্বজন-বাৎসল্যরূপ ক্ষুদ্র হৃদয়দৌৰ্ব্বল্য যখন অর্জনেরও ছিল, তখন আমাদের মত ক্ষুদ্র ব্যক্তিদেরও যে থাকবে তাতে আর আশ্চৰ্য্য কি ?