পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rob" नन 56 পলিটিক্যাল অর্থেই বুঝত। তখন আত্মজ্ঞান অর্থে আমরা বুঝতুম আমাদের পরাধীনতা সম্বন্ধে জাতীয় চৈতন্য ও বেদন । বলা বাহুল্য, এই সংকীর্ণ অর্থে, সমগ্ৰ ভারতবর্ষের আত্মজ্ঞান ও বাঙলার আত্মজ্ঞান একই বস্তু। কিন্তু এ বোঝাটা ভুল বোঝা। কেন না তা হলে স্বাধীন জাতের পক্ষে-জাতীয় আত্মজ্ঞান বলে কোনও জিনিসই নেই। কিন্তু তা যে আছে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই যে, ঐ সমস্ত পদটি ইউরোপ থেকে এ দেশে আমদানি করা হয়েছে, ও-পদের বিলেতে জন্ম। কথাটা এতই বিলেতি যে, আমাদের কোনও ভাষায় ওটির সঠিক তরজমা করা চলে না । মানুষ মাত্ৰেই মুখ্যতঃ এক হলেও সকলের শরীরের চেহারাও যেমন এক নয়, সকলের মনের চেহারাও এক নয়। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যেমন প্রকৃতির ও শক্তির প্রভেদ আছে, জাতির সঙ্গে জাতিরও তেমনি প্ৰকৃতির ও শক্তির প্রভেদ আছে। আর ব্যক্তিই বল আর জাতিই বল, উভয়েরই উন্নতির মানে হচ্ছে এই স্বাতন্ত্র্যাকে বিকশিত করে তোলা, কেন না সে চেষ্টাতেই তার সুখ, সেই চেষ্টাতেই তার মুক্তি। যাতে করে এই স্বাতন্ত্র্য চেপে দেয়। তাই হচ্ছে বন্ধন । জীবনের বন্ধনের চাইতে মনের বন্ধন কম মারাত্মক নয় । আর আমাদের মনের যে একটা বিশেষ ধাত আছে সে কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না । একটা জানা দৃষ্টান্ত নেওয়া যাৰ । জাতীয় মনের আসল প্ৰকাশ সাহিত্য । বৰ্ত্তমান ভারতবর্ষে - বাঙলা সাহিত্যের তুল্য দ্বিতীয় সাহিত্যে নেই। ভারতবর্ষের অপর কোনও জাতি দ্বিতীয় বঙ্কিমচন্দ্ৰ কিম্বা দ্বিতীয় রবীন্দ্ৰনাথের জন্মদান করতে পারে নি। অতএব এ কথা নিৰ্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, মনোজগতে আমরা বাকী ভারতবর্ষের সঙ্গে এক লোকে বাস করি নে।