পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম ԳS ‘ধৰ্ম্ম’ শব্দের অর্থ বৌদ্ধধৰ্ম্ম, এবং ধৰ্ম্মপূজা মানে বুদ্ধপূজা ; বাঙলা ভাষায় যে-সকল ধৰ্ম্মমঙ্গল আছে, সে সবই নাকি বৌদ্ধগ্রন্থ। এবং ময়নামতীর উপাখ্যান বৌদ্ধউপাখ্যান । কবিকঙ্কন চণ্ডীতে ও বুদ্ধের স্তব আছে। তারপর আমাদের অধিকাংশ দেবদেবীও নাকি ছদ্মবেশী বৌদ্ধ দেব-দেবী। “তারা” যে বৌদ্ধ-দেবতা, তা ত নিঃসন্দেহ। শীতলাও শুনতে পাই তাই। চণ্ডীদাসের ইষ্টদেবতা বা শুলিও নাকি বৌদ্ধদেবতা, আর বাঙলার পাষণের পিণ্ডাকার গ্রাম্য মঙ্গলচণ্ডী ছিল আদিতে বৌদ্ধস্ত প। এ অনুমান সম্ভবতঃ সত্য, কেননা এ সকল দেবদেবী যে ইন্দ্ৰ, চন্দ্র, বায়ু, বরুণের স্বগোত্ৰ ন’ন-অৰ্থাৎ বৈদিক ন’ন, তাদের বংশধরও যে নন, সে বিষয়ে তিলমাত্ৰ সন্দেহ নেই। বাঙালী সভ্যতার বুনিয়াদ যে বৌদ্ধ, হিন্দু স্তরের দু-হােত নীচেই যে বাঙলার বৌদ্ধ-স্তর পাওয়া যায়, আজকের দিনে তা প্ৰমাণ হয়ে গিয়েছে। বাঙলা দেশের মাটী দু-হােত খুঁড়লেই আমরা অসংখ্য বুদ্ধমূৰ্ত্তি ও বৌদ্ধমন্দিরের ভগ্নাবশেষের সাক্ষাৎ পাই। সুতরাং যদি কেউ বলে—মুসলমান যুগে বাঙালী হিন্দু হয়েছে, তাহলে সে কথা সত্যের খুব কাছ ঘেঁসে যাবে। যে-বৌদ্ধধৰ্ম্মের নাম পৰ্যন্ত এদেশে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেই ধৰ্ম্মই যে আজকাল আমাদের সকল গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে, তারই স্মরণ-চিহ্ন উদ্ধার করাই যে আমাদের পাণ্ডিত্যের প্রধান কৰ্ম্ম হয়ে উঠেছে, এটি সত্য সত্যই একটি অত্যাশ্চৰ্য্য ব্যাপার। এ অত্যাশ্চৰ্য্য ব্যাপার ঘটুল কি করে ?-ঘটেছে এই কারণে যে, ভারতবর্ষের এই প্ৰাচীন ধৰ্ম্মের সঙ্গে বর্তমান ইউরোপ, ভারতবাসীর নূতন করে আবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ।