পাতা:নানা-কথা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-সন্মিলন SS বৈজ্ঞানিক সত্য। পৃথিবী চেপ্টা, এটি হচ্ছে প্ৰতিভাসিক সত্য; আর পৃথিবী গোলাকার, এটি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক সত্য। পৃথিবী চেপ্টা ও সূৰ্য্যের যে উদয়াস্ত হয়, এ দুটিই হচ্ছে প্রত্যক্ষ সত্য ; অর্থাৎ আমাদের চােখের পক্ষে ও আমাদের চলাফেরার পক্ষে সম্পূর্ণ সত্য। যতখানি জমি বাঙলা দেশে চােখে দেখা যায়, তা যে সমতল, এর চাইতে খাঁটি সত্য আর নেই। সুতরাং পৃথিবীর যে খণ্ডদেশ আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ, তা চেপ্টাগােলাকার নয়। সমগ্ৰ পৃথিবীটি গােলাকার, কিন্তু সমগ্ৰ পৃথিবীটি প্রত্যক্ষ নয়। আমরা যখন প্রত্যক্ষের সীমা লঙ্ঘন করে। অপ্রত্যক্ষের বিষয় প্রত্যক্ষ-জ্ঞানের সাহায্যে জানতে চাই, তখনই আমরা ভ্ৰমে পড়ি। কারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান হচ্ছে সমষ্টির জ্ঞান, -অসংখ্য খণ্ড খণ্ড প্ৰত্যক্ষ-জ্ঞানের যোগাযোগ করে” সে জ্ঞান পাওয়া যায়। অসংখ্য চেপ্টা-খণ্ডকে ঠিক দিলে তা গোল হয়ে ওঠে। এক মুহূর্তে একদেশদর্শিতাই হচ্ছে প্রত্যক্ষজ্ঞানের ধৰ্ম্ম, সুতরাং কোনও একটি বিশেষ প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উপর নির্ভয়ে বৈজ্ঞানিক সত্যকে দাড় করান যায় না। ইন্দ্ৰিয় বাহাবস্তুর যে পরিচয় দেয়, সাধারণত মানুষে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ; কারণ তাতেই তার কাজ চলে যায়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক, ব্ৰহ্মাণ্ডকে একটি প্ৰকাণ্ড সমষ্টি হিসেবে দেখতে চায়; বিশ্বে একটা নিয়ম আছে এই বিশ্বাসে, সে সেই নিয়মের সন্ধানে ফেরে। বস্তু সকলকে পৃথকভাবে না দেখে, যুক্তভাবে দেখতে গিয়ে, বিজ্ঞান দেখতে পায় যে, প্ৰতিভাসিক সত্য সমগ্ৰ সত্য নয়। পৃথিবী যে চেপ্টা, ও সূৰ্য্য যে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে, প্রত্যক্ষ জ্ঞানের হিসেবে এ দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ পৃথক এবং সম্পর্ক রহিত সত্য। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে এ দু’টি হচ্ছে এক