পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
১৬

নীচ জাতি আছে যাহারা তুল্য গৌরবের অধিকারী। আরো একটা কথা এই,—পুরুষেরা যাহা ইচ্ছা করে, যাহা ধর্ম বলিয়া প্রচার করে, নারী তাহাই বিশ্বাস করে, এবং পুরুষের ইচ্ছাকেই নিজের ইচ্ছা বলিয়া ভুল করে এবং ভুল করিয়া সুখী হয়। হইতে পারে, ইহাতে নারীর গৌরব বাড়ে, কিন্তু সে-গৌরবে পুরুষের অগৌরব চাপা পড়ে না। যাই প্রশ্ন করা হয়, এত নিষ্ঠুর প্রথা কেন? উত্তর তৎক্ষণাৎ মুখে আসিয়া পড়ে, পরলোকে গিয়া স্বামীর সেবা করিবে। অথচ পরলোক যে কি, তাহা কয়টা পুরুষ জানে? আশ্চর্য, এত অত্যাচার, অবিচার, পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা সহ্য করা সত্ত্বেও নারী চিরদিন পুরুষকে স্নেহ করিয়াছে, শ্রদ্ধা করিয়াছে, ভক্তি করিয়াছে এবং বিশ্বাস করিয়াছে। যাহাকে সে পিতা বলে, ভ্রাতা বলে, স্বামী বলে, সে যে এত নীচ, এমন প্রবঞ্চক, এ-কথা বোধ করি সে স্বপ্নেও ভাবিতে পারে না। বোধ করি এইখানেই তাহার মূল্য।

 ‘বিল্বমঙ্গল’ একখানি প্রসিদ্ধ নাটক। বহুদিন হইতে ইহা প্রকাশ্য রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হইতেছে। বাঙালী আপত্তি করে না, কারণ ইহাতে ধর্মের কথা আছে। সহস্র লোকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বণিক লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দিয়া নিজের সহধর্মিণীকে লম্পট অতিথির শয্যায় প্রেরণ করে। দর্শক অর্থ ব্যয় করিয়া দেখে এবং খুব তারিফ দিতে থাকে। বণিকের বক্তৃতার সারমর্ম এই, সে প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, এ-বাড়িতে অতিথি বিমুখ করিবে না। পাছে তাহার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়, পাছে অধর্ম হয়, পাছে মৃত্যুর পর যমদুতে ডাঙস মারে—এই তার ভয়। তাহার মনের ভাবটা এই যে, আমার পায়ে তৃণাঙ্কুরও না বিদ্ধ হয় তোমার যা হয় তা হৌক। তা ছাড়া, শাস্ত্রে আছে, সর্বস্ব দিয়াও অতিথি-সৎকার করিবে। অর্থাৎ ধন-দৌলত, হাতি-ঘোড়া, গোরুবাছুর, যা কিছু সম্পত্তি আছে—সমস্তই। কিন্তু অতিথিটা যখন ওসব চায় না, তখন তুমিই যাও। আমার কাছে সে তোমাকে চাহিয়াছে এবং তুমি আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে। স্বামীর কাছে