পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭
নারীর মূল্য

বা জাতির সম্বন্ধে স্ত্রী অপেক্ষা জননী বা ভগিনী প্রিয়তর, এমন কথাটা বলিতে পারিলে হয়ত ভালই শোনায়, কিন্তু সেটা মিথ্যা বলা হয়। তবে এইখানে একটা বিষয়ে পাঠককে সতর্ক করাও আবশ্যক। যেহেতু, এমন কয়েকটা দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে তলাইয়া না দেখিলেই উল্টা ব্যাপার ঘটিতেছে বলিয়া ভ্রম হয়। কয়েকটা অসভ্য বা অর্ধ-সভ্য জাতির মধ্যে একদিকে নারীর যেমন দুর্দশার সীমা-পরিসীমা নাই, অন্যদিকে তেমনি ইহাকেই বাটীর এমন কি সমাজের কর্ত্রী হইতেও দেখা যায়। অসভ্য ফিউজিয়ানদের মধ্যে “oldest women exercise great authority.” মেক্সিকোর আদিম জাতির মধ্যেও তাই, হায়দাদিগের মধ্যেও তাই। চীনাদের মধ্যে বৃদ্ধা পিতামহী বাটীর কর্ত্রী। সুমাত্রা, মাডাগাস্কার, এমন কি কঙ্গোতেও রমণীকে রাণী হইতে দেখা গিয়াছে। কিন্তু তাহাতে কি? একটুখানি ভিতরে প্রবেশ করিলেই সংশয় জাগিয়া উঠে, যে-দেশে রমণী ভারবাহী জীব, বিবাহের সময় যাহার মূল্য গরু-বাছুরের তুলনায় নিরূপিত হয়, সন্তান-প্রসবে অক্ষম হইলে যাহাকে পুনরায় বাজারে বিক্রয় করিয়া ফেলা হয়, slave বলিতে যেখানে শুধু নারীই বুঝায়, সেই নারীর কর্তৃত্ব কেমন করিয়া একটা বাস্তব ব্যাপার হইতে পারে? ঠিক এই কথাটার উপরেই Boncroft একস্থানে বলিয়াছেন, স্ত্রীলোকের কর্তৃত্ব বোধ করি নাম-মাত্র। আমি নিজেদের ঘরের কথা ভাবিতেছিলাম। এদেশেও কর্তার অবর্তমানে বৃদ্ধা জননী বা পিতামহীকে কর্ত্রী বলিয়া স্বীকার করে। কিন্তু তার পরে? মনের অগোচরে পাপ নাই,—কথাটা ঘাঁটাঘাটি করিতে চাহি না। এ-দেশেই সম্পত্তির লোভে গুরুজনকে বাঁধিয়া পোড়ানো হইত। অথচ, পুরুষের নানাবিধ জবাবদিহির মধ্যে একটা চমৎকার জবাবদিহি স্পেন্সর সাহেবের পুস্তকে লেখা আছে—“It was adopted as a remedy for the practice of poisoning their husbands, which had become common among Hindoo women.” খবরটি