পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৫৮

কোন্ পণ্ডিত তাঁহাকে দিয়াছিল জানি না, কিন্তু পোড়ানোর ধরণ-ধারণ দেখিয়া সে-বেচারা বিদেশীর চোখে বোধ করি নারীর এমনি একটা কিছু গুরুতর অপরাধের কথাই সম্ভবপর বলিয়া ঠেকিয়াছিল। হায় রে, পুড়িয়া মরিয়াও নিষ্কৃতি নাই! যাহাই হৌক, কথাটা মিথ্যা, সে নিজেই বানাইয়াছিল। কারণ, এ-দেশের টুলো পণ্ডিতদের তরফ হইতে পোড়াইয়া মারার সপক্ষে বিলাতে যে আপীল রুজু করা হইয়াছিল, তাহাতে বিধবার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের উল্লেখ নাই। যাক এ-কথা।

 কথা হইতেছিল, ঐ কয়েকটি স্থানে অবস্থাবিশেষে নারীর কর্তৃত্বের বস্তুগত্যা অস্তিত্ব আছে কি না। থাকিলেও কিভাবে থাকা অধিক সম্ভবপর? কিন্তু নর-নারীর যাবতীয় সম্বন্ধের ন্যায়সঙ্গত দাবী নারীর যাহাই হৌক, পুরুষ স্থান, কাল ও অবস্থাভেদে যে-মূল্য তাহাকে দিয়া আসিতেছে, সেই তাহার প্রাপ্য মূল্য কি না? কারণ, পুরুষ এই বলিয়া একটা বড় রকমের উত্তর করিতে পারে যে, অবস্থাভেদে সে যে-মূল্য রমণীকে দিয়া আসিয়াছে তাহা ঠিকই হইয়াছে। যেমন, এদেশের কোন এক পণ্ডিত তাঁহার বইয়ে লিখিয়াছেন যে, মনুর সময়ে ব্যভিচার-স্রোত অত্যন্ত প্রবল ছিল বলিয়াই অমন হাড়-ভাঙ্গা আইন-কানুন নারীর উপর জারি করা হইয়াছিল। বোধ করি ইহার ধারণা যে, ব্যভিচারের জন্য শুধু নারীই দায়ী, পুরুষের তাহাতে নামগন্ধও ছিল না। সে যাহাই হৌক, এই উত্তরটারও কোন বনিয়াদ আছে কি না, তাহার মীমাংসা করা আবশ্যক। ইতিপূর্বে এই প্রবন্ধের একস্থানে বলিয়াছি, সংসারে নারী যদি বিরল হইতেন, তবেই নারীর যধার্থ মূল্য স্থির করা সহজ হইত, কিন্তু ‘যদি’ কথা ছাড়িয়া দিয়া ইহার বর্তমান অবস্থার ঠিক দামটি পুরুষ দিয়াছে কি না, তাহাই দেখিবার চেষ্টা করিতেছি।

 অ্যাডাম স্মিথ যখন প্রথম প্রচার করেন, জগতের সমস্ত বস্তুই যেমন নৈসর্গিক নিয়মের অধীন, তাহাদের মূল্যও সেই নিয়মেরই অধীন, তখন সকল লোকে বুঝিতে পারে নাই। তাহারা মনে করিয়াছিল,