পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৬০

যদি দেখা যায়, পুরুষ নারীকে যে মূল্য দিয়া আসিয়াছে, তাহাতে উত্তরোত্তর ভালই হইয়াছে, তাহা হইলে নিশ্চয় ইহাই তাহাতে প্রাপ্য মূল্য; অন্যথা স্বীকার করিতেই হইবে, বঞ্চনা করিয়াছে, পীড়ন করিয়াছে এবং সেইসঙ্গে সমাজে অকল্যাণ টানিয়া আনিয়াছে। প্রথমে একটা অবান্তর কথা বলিব। আমার এই প্রবন্ধের কতকটা পাঠ করিয়াই সেদিন আমার এক আত্মীয় “morbid mind”-এর পরিচয় পাইয়াছেন; আর এক আত্মীয় নর-নারীর বিসদৃশ সম্বন্ধের আলোচনা করা অপরাধে এমনিই কি-একটা মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন। পুরুষেরা যে এ-কথা বলিবেন, তাহা জানিতাম; কিন্তু এ-সকল কথার উত্তর দিতে আমার লজ্জা বোধ হয়।

 আগে আদিম ও অসভ্য মানব-জাতির সামাজিক ও সাংসারিক আচারব্যবহারের উল্লেখ করিতে গিয়া এমন অনেক কথা বাধ্য হইয়া আমাকে বলিতে হইয়াছে, যাহা পাঠ করিলেও মানুষ শিহরিয়া উঠে। কিন্তু ও-সব উল্লেখের প্রয়োজন শুধু যে পুরুষের দোষ দেখাইবার জন্যই হইয়াছিল, তাহা নহে। সামাজিক মানব-সম্বন্ধে এই যে একটা উক্তি আছে যে, “perhaps in no way is the moral progress of mankind more clearly shown than by contrasting the position of women among savage with their position among the most advanced of the civilized. ইহা সত্য বলিয়া মনে করি বলিয়াই ঐ-সব দৃষ্টান্ত দিবার আবশ্যক হইয়াছিল। বস্তুতঃ, মানবের নৈতিক উন্নতি অবনতি বুঝিয়া লইবার ইহা অপেক্ষা প্রকৃষ্ট উপায় আছে কি না জানি না বলিয়াই অত কথা বলিয়াছি, তা আমার আত্মীয়-দুটি বিশ্বাস করুন, আর নাই করুন।

 আর একবার মধুর রসের কথাটা পাড়িব। কারণ, এই রস মানুষকে কতভাবে, কত দিক দিয়া যে মানুষ করিয়া তুলিয়াছে, তাহা বুঝিয়া লওয়া আবশ্যক। সুতরাং, একবার যাহা বলিয়াছি, পুনরায় তাহার আবৃত্তি করিতেছি,—এই রসবোধ যেখানে যত কম, এদিকে দৃষ্টি যাহার