পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রমেশ। তিনি পদ্মা বাহিয়া নৌকা করিয়া বাড়ি আসিতেছিলেন, হঠাৎ ঝড়ে নৌকা ডুবিয়া তাঁহার মৃত্যু হয়।

 একটা প্রবল হাওয়া উঠিলে যেমন অকস্মাৎ ঘন মেঘ কাটিয়া আকাশ পরিষ্কার হইয়া যায় তেমনি এই শোকের সংবাদে রমেশ ও হেমনলিনীর মাঝখানকার গ্লানি মুহূর্তের মধ্যে কাটিয়া গেল। হেম অন্ততাপসহকারে মনে মনে কহিল, ‘রমেশবাবুকে ভুল বুঝিয়াছিলাম– তিনি পিতৃ-বিয়োগের শোকে এবং গোলমালে উদ্‌ভ্রান্ত ছিলেন। এখনো হতো তাহাই লইয়া উন্মনা হইয়া আছেন। উঁহার সাংসারিক কী সংকট ঘটিয়াছে, উঁহার মনের মধ্যে কী ভার চাপিয়াছে, তাহা কিছুই না জানিয়াই আমরা উঁহাকে দোষী করিতেছিলাম।’

 হেমনলিনী এই পিতৃহীনকে বেশি করিয়া যত্ন করিতে লাগিল। রমেশের আহারে অভিরুচি ছিল না, হেমনলিনী তাহাকে বিশেষ পীড়াপীড়ি করিয়া খাওয়াইল। কহিল, “আপনি বড় রোগা হইয়া গেছেন, শরীরের অযত্ন করিবেন না।” অন্নদাবাবুকে কহিল, “বাবা, রমেশবাবু আজ রাত্রেও এইখানেই খাইয়া যান-না।”

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “বেশ তো।”

 এমন সময় অক্ষয় আসিয়া উপস্থিত। অন্নদাবাবুর চায়ের টেবিলে কিছু কাল অক্ষয় একাধিপত্য করিয়া আসিয়াছে। আজ সহসা রমেশকে দেখিয়া সে থমকিয়া গেল। আত্মসংবরণ করিয়া হাসিয়া কহিল, “একী। এযে রমেশবাবু। আমি বলি আমাদের বুঝি একেবারেই ভুলিয়া গেলেন।”

 রমেশ কোনো উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিল। অক্ষয় কহিল, “আপনার বাবা আপনাকে যেরকম তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া গেলেন, আমি ভাবিলাম, তিনি এবার আপনার বিবাহ না দিয়া কিছুতেই ছাড়িবেন না— ফাঁড়া কাটাইয়া আসিয়াছেন তো?”

২৯