পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হেমনলিনী অক্ষয়কে বিরক্তিদৃষ্টি দ্বারা বিদ্ধ করিল।

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “অক্ষয়, রমেশের পিতৃবিয়োগ হইয়াছে।”

 রমেশ বিবর্ণ মুখ নত করিয়া বলিয়া রহিল। তাহাকে বেদনার উপর ব্যথা দিল বলিয়া হেমনলিনী অক্ষয়ের প্রতি মনে মনে ভারি রাগ করিল। রমেশকে তাড়াতাড়ি কহিল, “রমেশবাবু। আপনাকে আমাদের নূতন অ্যালবামখানা দেখানো হয় নাই।”— বলিয়া অ্যালবাম আনিয়া রমেশকে টেবিলের এক প্রান্তে লইয়া গিয়া ছবি লইয়া আলোচনা করিতে লাগিল এবং এক সময়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, “রমেশবাবু, আপনি বোধ হয় নূতন বাসায় একলা থাকেন?”

 রমেশ কহিল, “হাঁ।”

 হেমনলিনী। আমাদের পাশের বাড়িতে আসিতে আপনি দেরি করিবেন না।

 রমেশ বলিল, “না, আমি এই সোমবারেই নিশ্চয় আসিব।”

 হেমনলিনী। মনে করিতেছি, আমাদের বি.এ. ফিলজফি আপনার কাছে মাঝে মাঝে বুঝাইয়া লইব।

 রমেশ তাহাতে বিশেষ উৎসাহ প্রকাশ করিল।

 রমেশ পূর্বের বাসায় আসিতে বিলম্ব করিল না।

 ইহার আগে হেমনলিনীর সঙ্গে রমেশের যতটুকু দূরভাব ছিল এবারে তাহা আর রহিল লা। রমেশ যেন একেবারে ঘরের লোক। হাসি-কৌতুক নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ খুব জমিয়া উঠিল।

 অনেক কাল অনেক পড়া মুখস্থ করিয়া ইতিপূর্বে হেমনলিনীর চেহারা

৩০