পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হেমনলিনীর দূরে যাইবার সম্ভাবনায় কয়দিন তাহার হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হইয়া ছিল— আজ উল্লাসের বেগে সঙ্গীতবিদ্যা সম্বন্ধে সর্বপ্রকার ন্যায়-অন্যায়-বোধ একেবারে বিসর্জন দিল।

 এমন সময় দরজায় ঘা পড়িল, “আ সর্বনাশ, থামুন, থামুন রমেশবাবু, করিতেছেন কী।”

 রমেশ অত্যঙ্গ লজ্জিত হইয়া আরক্তমুখে দরজা খুলিয়া দিল। অক্ষয় ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, “রমেশবাবু, গোপনে বসিয়া এই যে কাণ্ডটি করিতেছেন আপনাদের ক্রিমিনাল কোডের কোনো দণ্ডবিধির মধ্যে কি পড়ে না।”

 রমেশ হাসিতে লাগিল, কহিল, “অপরাধ কবুল করিতেছি।”

 অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আপনি যদি কিছু না মনে করেন আপনার সঙ্গে আমার একটা কথা আলোচনা করিবার আছে।”

 রমেশ উৎকণ্ঠিত হইয়া নীরবে আলোচ্য বিষয়ের প্রতীক্ষা করিয়া রহিল।

 অক্ষয়। আপনি এত দিনে এটুক বুঝিয়াছেন, হেমনলিনীর ভালো মন্দের প্রতি আমি উদাসীন নহি।

 রমেশ হাঁ না কিছু না বলিয়া চুপ করিয়া শুনিতে লাগিল।

 অক্ষয়। তাঁহার সম্বন্ধে আপনার অভিপ্রায় কী তাহা জিজ্ঞাসা করিবার অধিকার আমার মাছে— আমি অন্নদাবাবুর বন্ধু।

 কথাটা এবং কথার ধরনটা রমেশের অত্যন্ত খারাপ লাগিল। কিন্তু কড়া জবাব দিবার অভ্যাস ও ক্ষমতা রমেশের নাই। সে মৃদু স্বরে কহিল, “তাঁহার সম্বন্ধে আমার কোনো মন্দ অভিপ্রায় আছে এ আশঙ্কা আপনার মনে আসিবার কি কোনো কারণ ঘটিয়াছে।”

 অক্ষয়। দেখুন, আপনি হিন্দুপরিবারে আছেন, আপনার পিতা

৪২