পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “আর কিছুই নয়, হজমের গোল হইয়াছে— পিত্তাধিক্য। আমি যে পিল ব্যবহার করিয়া থাকি তাহার একটা খাইয়া দেখো দেখি—”

 হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “বাবা, এই পিল খাওয়াও নাই তোমার এমন আলাপী কেহ দেখি না— কিন্তু তাহাদের এমন কী উপকার হইয়াছে।”

 অন্নদা। অনিষ্ট তো হয় নাই। আমি যে নিজে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি— এ-পর্যন্ত যতরকম পিল খাইয়াছি এইটেই সবচেয়ে উপকারী।

 হেমনলিনী। বাবা, যখনি তুমি একটা নূতন পিল খাইতে আরম্ভ কর তখনি কিছুদিন তাহার অশেষ গুণ দেখিতে পাও—

 অন্নদা। তোমরা কিছুই বিশ্বাস কর না— আচ্ছা, অক্ষয়কে জিজ্ঞাসা করিয়ো দেখি আমার চিকিৎসার সে উপকার পাইয়াছে কি না।

 সেই প্রাথমিক সাক্ষীকে তলবের ভয়ে হেমনলিনীকে নিরুত্তর হইতে হইল। কিন্তু সাক্ষী আপনি আসিয়া হাজির হইল। আসিয়াই অন্নদাবাবুকে কহিল, “বাবু, আপনার সেই পিল আমাকে আর-একটি দিতে হইবে। বড়ো উপকার হইয়াছে। আজ শরীর এমনি হালকা বোধ হইতেছে।”

 অন্নদাবাবু সগর্বে তাঁহার কন্যার দিকে তাকাইলেন।


১২

 পিল পাওয়ার পর অন্নদাবাবু অক্ষয়কে শীঘ্র ছাড়িতে চাহিলেন না। অক্ষয়ও যাইবার জন্য বিশেষ ত্বরা প্রকাশ না করিয়া মাঝে মাঝে রমেশের মুখের দিকে কটাক্ষপাত করিতে লাগিল। রমেশের চোখে সহজে কিছু

৪৫