পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আর কিছুই খেয়াল কর না। যখন পড়া লইয়া ছিলে তখন বই কোল হউতে নামিত না— এখন সেলাই লইয়া পড়িয়াছ, এখন আর-সমস্তই বন্ধ। না না, সে হইবে না— চলাে, নীচে গিয়া চা খাইবে চলাে।

 এই বলিয়া অন্নদাবাবু জাের করিয়াই হেমনলিনীকে নীচে লইয়া আসিলেন। সে আসিয়া কাহারাে দিকে দৃষ্টি না করিয়া তাড়াতাড়ি চা ঢালিবার ব্যাপারে ভারি ব্যস্ত হইয়া উঠিল।

 অন্নদাবাবু অধীর হইয়া কহিলেন, “হেম, ও কী করিতেছে। আমার পেয়ালায় চিনি দিতেছ কেন। আমি তাে কোনােকালেই চিনি দিয়া চা খাই না।”

 অক্ষয় টিপিটিপি হাসিয়া কহিল, “আজ উনি ঔদার্য সংবরণ করিতে পারিতেছেন না— আজ সকলকেই মিষ্ট বিতরণ করিবেন।”

 হেমনলিনীর প্রতি এই প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ রমেশের মনে মনে অসহ্য হইল। সে ততৎক্ষণাৎ স্থির করিল, ‘আর যাই হউক, বিবাহের পরে অক্ষয়ের সহিত কোনাে সম্পর্ক রাখা হইবে না।’

 ইহার তিন-চার দিন পরে একদিন সন্ধ্যার সময় চায়ের টেবিলে অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আপনার নামটা বদলাইয়া ফেলুন।”

 রমেশ এই রসিকতার চেষ্টায় অধিকতর বিরক্ত হইয়া কহিল, “কেন বলুন দেখি।”

 অক্ষয় খবরের কাগজ খুলিয়া কহিল, “এই দেখুন, আপনার নামের একজন ছাত্র অন্য লােককে নিজের নামে চালাইয়া পরীক্ষা দেওয়াইয়া পাস হইয়াছিল, হঠাৎ ধরা পড়িয়াছে।”

 হেমনলিনী জানে, রমেশ মুখের উপর উত্তর দিতে পারে না— সেইজন্য এত কাল অক্ষয় রমেশকে যত আঘাত করিয়াছে সে’ই তাহার প্রতিঘাত দিয়া আসিয়াছে। আজও থাকিতে পারিল না। গূঢ় ক্রোধের

৫২