পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বসিয়া একমনে সেলাই করিতে প্রবৃত্ত হইল। ছুঁচ ফুটিতে লাগিল কেবল বাহিরে নহে, ভিতরেও। রমেশের প্রয়োজনও শীঘ্র শেষ হইল না। প্রয়োজন রাজার মতো আপনার পুরা সময় লয়— আর ভালোবাসা কাঙাল।


১৪

 রমেশ অন্নদাবাবুর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তখন অন্নদাবাবু মুখের উপরে খবরের কাগজ চাপা দিয়া কেদারায় পড়িয়া নিদ্রা দিতেছিলেন। রমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া কাসিতেই তিনি চকিত হইয়া উঠিয়া খবরের কাগজটা তুলিয়া ধরিয়াই কহিলেন, “দেখিয়াছ রমেশ, এবারে ওলাউঠায় কত লোক মরিয়াছে।”

 রমেশ কহিল, “বিবাহ এখন কিছুদিন বন্ধ রাখিতে হইবে— আমার বিশেষ কাজ আাছে।” অন্নদাবাবুর মাথা হইতে শহরের মৃত্যুতালিকার বিবরণ একেবারে লুপ্ত হইয়া গেল। ক্ষণকাল রমেশের মুখের দিকে তাকাইয়া কহিলেন, “সে কী কথা রমেশ। নিমন্ত্রণ যে হইয়া গেছে।”

 সে কহিল, “এই রবিবারের পরের রবিবারে দিন পিছাইয়া দিয়া আজই পত্র বিলি করিয়া দেওয়া যাইতে পারে।”

 অন্নদা। রমেশ, তুমি আমাকে অবাক করিলে। এ কি মকদ্দমা যে তোমার সুবিধামতো তুমি দিন পিছাইয়া মুলতুবি করিতে থাকিবে। তোমার প্রয়োজনটা কী শুনি।

 রমেশ। সে অত্যন্ত বিশেষ প্রয়োজন, বিলম্ব করিলে চলিবে না।

 অন্নদাবাবু বাতাহত কদলীবৃক্ষের মতো কেদারার উপয় হেলান হিয়া

৫৮