পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



কাব্যের তাৎপর্য


 স্রোতস্বিনী আমাকে কহিলেন, ‘কচ-দেবযানী-সংবাদ সম্বন্ধে তুমি যে কবিতা লিথিয়াছ তাহা তোমার মুখে শুনিতে ইচ্ছা করি।’

 শুনিয়া আমি মনে মনে কিঞ্চিৎ গর্ব অনুভব করিলাম; কিন্তু দর্পহারী মধুসূদন তখন সজাগ ছিলেন, তাই দীপ্তি অধীর হইয়া বলিয়া উঠিলেন, ‘তুমি রাগ করিয়ো না, সে কবিতাটার কোনো তাৎপর্য কিম্বা উদ্দেশ্য আমি তো কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। ও লেখাটা ভালো হয় নাই।’

 আমি চুপ করিয়া রহিলাম; মনে মনে কহিলাম, আর একটু বিনয়ের সহিত মত প্রকাশ করিলে সংসারের বিশেষ ক্ষতি অথবা সত্যের বিশেষ অপলাপ হইত না; কারণ, লেখার দোষ থাকাও যেমন আশ্চর্য নহে তেমনি পাঠকের কাব্যবোধশক্তির খর্বতাও নিতান্তই অসম্ভব বলিতে পারি না। মুখে বলিলাম, ‘যদিও নিজের রচনা সম্বন্ধে লেখকের মনে অনেক সময়ে অসন্দিগ্ধ মত থাকে তথাপি তাহা যে ভ্রান্ত হইতে পারে ইতিহাসে এমন অনেক প্রমাণ আছে। অপর পক্ষে, সমালোচক-সম্প্রদায়ও যে সম্পূর্ণ অভ্রান্ত নহে ইতিহাসে সে প্রমাণেরও কিছুমাত্র অসদ্ভাব নাই। অতএব কেবল এইটুকু নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, আমার এ লেখা ঠিক তোমার মনের মতো হয় নাই; সে নিশ্চয় আমার দুর্ভাগ্য, হয়তো তোমার দুর্ভাগ্যও হইতে পারে।’

 দীপ্তি গম্ভীরমুখে অত্যন্ত সংক্ষেপে কহিলেন, ‘তা হইবে।’

 বলিয়া একখানা বই টানিয়া লইয়া পড়িতে লাগিলেন।

 ইহার পরে স্রোতস্বিনী আমাকে সেই কবিতা পড়িবার জন্য আর দ্বিতীয়বার অনুরোধ করিলেন না।

 ব্যোম জানালার বাহিরের দিকে দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া যেন সুদূর আকাশতলবর্তী কোনো এক কাল্পনিক পুরুষকে সম্বোধন করিয়া কহিল,

৯৩