পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

 সমীর নিঃশেষিত পাত্রে দ্বিতীয় বার চা ঢালিয়া কহিল, ‘কেবল মেয়েদের হাসি নয়, হাস্যরসটাই আমার কাছে কিছু অসংগত ঠেকে। দুঃখে কাঁদি সুখে হাসি এটুকু বুঝিতে বিলম্ব হয় না, কিন্তু কৌতুকে হাসি কেন। কৌতুক তো ঠিক সুখ নয়। মোটা মানুষ চৌকি ভাঙিয়া পড়িয়া গেলে আমাদের কোনো সুখের কারণ ঘটে, এ কথা বলিতে পারি না, কিন্তু হাসির কারণ ঘটে ইহা পরীক্ষিত সত্য। ভাবিয়া দেখিলে ইহার মধ্যে আশ্চর্যের বিষয় আছে।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘রক্ষা করো, ভাই। না ভাবিয়া আশ্চর্য হইবার বিষয় জগতে যথেষ্ট আছে; আগে সেইগুলো শেষ করো, তার পরে ভাবিতে শুরু করিয়ো। এক জন পাগল তাহার উঠানকে ধূলিশূন্য করিবার অভিপ্রায়ে প্রথমতঃ ঝাঁটা দিয়া আচ্ছা করিয়া ঝাঁটাইল, তাহাতেও সম্পূর্ণ সন্তোষজনক ফল না পাইয়া কোদাল দিয়া মাটি চাঁচিতে আরম্ভ করিল। সে মনে করিয়াছিল, এই ধুলোমাটির পৃথিবীটাকে সে নিঃশেষে আকাশে ঝাঁটাইয়া ফেলিয়া অবশেষে দিব্য একটি পরিষ্কার উঠান পাইবে। বলা বাহুল্য, বিস্তর অধ্যবসায়েও কৃতকার্য হইতে পারে নাই। ভ্রাতঃ সমীর, তুমি যদি আশ্চর্যের উপরিস্তর ঝাঁটাইয়া অবশেষে ভাবিয়া আশ্চর্য হইতে আরম্ভ কর, তবে আমরা বন্ধুগণ, বিদায় লই। কালোহ্যয়ং নিরবধি, কিন্তু সেই নিরবধি কাল আমাদের হাতে নাই।’

 সমীর হাসিয়া কহিল, ‘ভাই ক্ষিতি, আমার অপেক্ষা ভাবনা তোমারই বেশি। অনেক ভাবিলে তোমাকেও সৃষ্টির একটা মহাশ্চর্য ব্যাপার মনে হইতে পারিত, কিন্তু আরো ঢের বেশি না ভাবিলে আমার সহিত তোমার সেই উঠানমার্জনকারী আদর্শটির সাদৃশ্য কল্পনা করিতে পারিতে না।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘মাপ করো ভাই, তুমি আমার অনেক কালের

১১১