পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

বিশেষ পরিচিত বন্ধু, সেই জন্যই আমার মনে এতটা আশঙ্কার উদয় হইয়াছিল। যাহা হউক, কথাটা এই যে, কৌতুকে আমরা হাসি কেন। ভারি আশ্চর্য! কিন্তু তাহার পরের প্রশ্ন এই যে, যে কারণেই হউক হাসি কেন। একটা কিছু ভালো লাগিবার বিষয় যেই আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হইল, অমনি আমাদের গলার ভিতর দিয়া একটা অদ্ভুত প্রকারের শব্দ বাহির হইতে লাগিল এবং আমাদের মুখের সমস্ত মাংসপেশী বিকৃত হইয়া সম্মুখের দন্তপংক্তি বাহির হইয়া পড়িল— মনুষ্যের মতো ভদ্র জীবের পক্ষে এমন একটা অসংযত অসংগত ব্যাপার কি সামান্য অদ্ভুত এবং অবমানজনক; যুরোপের ভদ্রলোক ভয়ের চিহ্ন, দুঃখের চিহ্ন, প্রকাশ করিতে লজ্জা বোধ করেন— আমরা প্রাচ্যজাতীয়ের সভ্যসমাজে কৌতুকের চিহ্ন প্রকাশ করাটাকে নিতান্ত অসংযমের পরিচয় জ্ঞান করি— ’

 সমীর ক্ষিতিকে কথা শেষ করিতে না দিয়া কহিল, ‘তাহার কারণ, আমাদের মতে কৌতুকে আমোদ অনুভব করা নিতান্ত অযৌক্তিক। উহা ছেলেমানুষেরই উপযুক্ত। এই জন্য কৌতুকরসকে আমাদের প্রবীণ লোক-মাত্রেই ছ্যাব্‌লামি বলিয়া ঘৃণা করিয়া থাকেন। একটা গানে শুনিয়াছিলাম, শ্রীকৃষ্ণ নিদ্রাভঙ্গে প্রাতঃকালে হুঁকা হস্তে রাধিকার কুটিরে কিঞ্চিৎ অঙ্গারের প্রার্থনায় আগমন করিয়াছিলেন। শুনিয়া শ্রোতামাত্রের হাস্য উদ্রেক করিয়াছিল। কিন্তু হুঁকা হস্তে শ্রীকৃষ্ণের কল্পনা সুন্দরও নহে, কাহারও পক্ষে আনন্দজনকও নহে—তবুও যে আমাদের হাসি ও আমোদের উদয় হয় তাহা অদ্ভূত ও অমূলক নহে তো কী। এই জন্যই এরূপ চাপল্য আমাদের বিজ্ঞসমাজের অমুমোদিত নহে। ইহা যেন অনেকটা পরিমাণে শারীরিক; কেবল স্বায়ুর উত্তেজনা মাত্র। ইহার সহিত আমাদের সৌন্দর্যবোধ, বুদ্ধিবৃত্তি, এমন কি স্বার্থবোধেরও যোগ নাই। অতএব অনর্থক সামান্য কারণে ক্ষণকালের জন্য বুদ্ধির এরূপ

১১২