পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

কৃতঘ্নতাশর-বিদ্ধ উন্মাদ লিয়রের মর্মযাতনায় আমরা ব্যথা বোধ করি— কিন্তু সেই দুঃখপীড়া বেদনা উদ্রেক করিতে না পারিলে সে সকল কাব্য আমাদের নিকট তুচ্ছ হইত। বরঞ্চ দুঃখের কাব্যকে আমরা মুখের কাব্য অপেক্ষা অধিক সমাদর করি। কারণ, দুঃখামুভবে আমাদের চিত্তে অধিকতর আন্দোলন উপস্থিত করে। কৌতুক মনের মধ্যে হঠাৎ আঘাত করিয়া আমাদের সাধারণ অনুভবক্রিয়া জাগ্রত করিয়া দেয়। এই জন্য অনেক রসিক লোক হঠাৎ শরীরে একটা আঘাত করাকে পরিহাস জ্ঞান করেন, অনেকে গালিকে ঠাট্টার স্বরূপে ব্যবহার করিয়া থাকেন, বাসরঘরে কর্ণমর্দন এবং অন্যান্য পীড়ন-নৈপুণ্যকে বঙ্গসীমন্তিনীগণ এক শ্রেণীর হাস্যরস বলিয়া স্থির করিয়াছেন, হঠাৎ উৎকট বোমার আওয়াজ করা আমাদের দেশে উৎসবের অঙ্গ, এবং কর্ণবধিরকর খোল-করতালের শব্দ দ্বারা চিত্তকে ধূমপীড়িত মৌচাকের মৌমাছির মতো একান্ত উদ্‌ভ্রান্ত করিয়া ভক্তিরসের অবতারণা করা হয়।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘বন্ধুগণ, ক্ষান্ত হও। কথাটা এক প্রকার শেষ হইয়াছে। যতটুকু পীড়নে সুখ বোধ হয় তাহা তোমরা অতিক্রম করিয়াছ, এক্ষণে দুঃখ ক্রমে প্রবল হইয়া উঠিতেছে। আমরা বেশ বুঝিয়াছি যে, কমেডির হাস্য এবং ট্র্যাজেডির অশ্রুজল দুঃখের তারতম্যের উপর নির্ভর করে— ’

 ব্যোম কহিল, ‘যেমন বরফের উপর প্রথম রৌদ্র পড়িলে তাহা ঝিকমিক্‌ করিতে থাকে, এবং রৌদ্রের তাপ বাড়িয়া উঠিলে তাহা গলিয়া পড়ে। তুমি কতকগুলি প্রহসন ও ট্র্যাজেডির নাম করে, আমি তাহা হইতে প্রমাণ করিয়া দিতেছি—’

 এমন সময় দীপ্তি ও স্রোতস্বিনী হাসিতে হাসিতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দীপ্তি কহিলেন, ‘তোমরা কী প্রমাণ করিবার জন্য উদ্যত হইয়াছ।’

১১৬