পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

 ক্ষিতি কহিল, ‘আমরা প্রমাণ করিতেছিলাম যে, তোমরা এত ক্ষণ বিনা কারণে হাসিতেছিলে।’

 শুনিয়া দীপ্তি স্রোতস্বিনীর মুখের দিকে চাহিলেন, স্রোতস্বিনী দীপ্তির মুখের দিকে চাহিলেন, এবং উভয়ে পুনরায় কলকণ্ঠে হাসিয়া উঠিলেন।

 ব্যোম কহিল, ‘আমি প্রমাণ করিতে যাইতেছিলাম যে, কমেডিতে পরের অল্প পীড়া দেখিয়া আমরা হাসি এবং ট্র্যাজেডিতে পরের অধিক পীড়া দেখিয়া আমরা কাঁদি।’

 দীপ্তি ও স্রোতস্বিনীর সুমিষ্ট সম্মিলিত হাস্যরবে পুনশ্চ গৃহ কূজিত হইয়া উঠিল, এবং অনর্থক হাস্য-উদ্রেকের জন্য উভয়ে উভয়কে দোষী করিয়া পরস্পরকে তর্জন-পূর্বক হাসিতে হাসিতে সলজ্জ ভাবে দুই সখী গৃহ হইতে প্রস্থান করিলেন।

 পুরুষ সভ্যগণ এই অকারণ হাস্যোচ্ছ্বাস-দৃশ্যে স্মিতমুখে অবাক হইয়া রহিল। কেবল সমীর কহিল, ‘ব্যোম, বেলা অনেক হইয়াছে, এখন তোমার ঐ বিচিত্রবর্ণের নাগপাশ-বন্ধনটা খুলিয়া ফেলিলে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা দেখি না।’

 ক্ষিতি ব্যোমের লাঠিগাছটি তুলিয়া অনেক ক্ষণ মনোযোগের সহিত নিরীক্ষণ করিয়া কহিল, ‘ব্যোম, তোমার এই গদাখানি কি কমেডির বিষয় না ট্র্যাজেডির উপকরণ।’

১১৭