পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্যের মাত্রা

আছে যাহাতে প্রতি পদে গভীরতার দিকে তলাইয়া যাইতে হয়; কথোপকথনকালে সেই সকল অনিশ্চিত সন্দেহতরল বিষয়ে পদার্পণ না করাই ভালো। সে সব জমি বায়ুসেবী পর্যটনকারীদের উপযোগী নহে, কৃষি যাহাদের ব্যবসায় তাহাদের পক্ষেই ভালো।

 যাহা হউক, সে দিন মোটের উপরে আমরা প্রশ্নটা এই তুলিয়াছিলাম যে, যেমন দুঃখের কান্না তেমনি সুখের হাসি আছে, কিন্তু মাঝে হইতে কৌতুকের হাসিটা কোথা হইতে আসিল। কৌতুক জিনিসটা কিছু রহস্যময়। জন্তুরাও সুখদুঃখ অনুভব করে, কিন্তু কৌতুক অনুভব করে না। অলংকারশাস্ত্রে যে ক’টা রসের উল্লেখ আছে সব রসই জন্তুদের অপরিণত অপরিস্ফুট সাহিত্যের মধ্যে আছে, কেবল হাস্যরসটা নাই। হয়তো বানরের প্রকৃতির মধ্যে এই রসের কথঞ্চিৎ আভাস দেখা যায়, কিন্তু বানরের সহিত মানুষের আরো অনেক বিষয়েই সাদৃশ্য আছে।

 যাহা অসংগত তাহাতে মানুষের দুঃখ পাওয়া উচিত ছিল, হাসি পাইবার কোনো অর্থ ই নাই। পশ্চাতে যখন চৌকি নাই তখন চৌকিতে বসিতেছি মনে করিয়া কেহ যদি মাটিতে পড়িয়া যায় তবে তাহাতে দর্শকবৃন্দের সুখানুভব করিবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখা যায় না। এমন একটা উদাহরণ কেন, কৌতুকমাত্রেরই মধ্যে এমন একটা পদার্থ আছে যাহাতে মানুষের সুখ না হইয়া দুঃখ হওয়া উচিত।

 আমরা কথায় কথায় সে দিন ইহার একটা কারণ নির্দেশ করিয়াছিলাম। আমরা বলিয়াছিলাম, কৌতুকের হাসি এবং আমোদের হাসি একজাতীয়— উভয় হাস্যের মধ্যেই একটা প্রবলতা আছে। তাই আমাদের সন্দেহ হইয়াছিল যে, হয়তো আমোদ এবং কৌতুকের মধ্যে একটা প্রকৃতিগত সাদৃশ্য আছে; সেইটে বাহির করিতে পারিলেই কৌতুকহাস্যের রহস্য-ভেদ হইতে পারে।

১২১