পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



সৌন্দর্য সম্বন্ধে সন্তোষ

থাকিবার কোনো আবশ্যক করে না; এমন কি, ঘোরতর পশুত্ব থাকিলেও পূজার ব্যাঘাত হয় না। তাহারা এক দিকে স্বামীকে মানুষভাবে লাঞ্ছনা গঞ্জনা করিতে পারে, আবার জন্য দিকে দেবতাভাবে পূজাও করিয়া থাকে। একটাতে অন্যটা অভিভূত হয় না। কারণ, আমাদের মনোজগতের সহিত বাহ্যজগতের সংঘাত তেমন প্রবল নহে।’

 সমীর কহিল, ‘কেবল স্বামীদেবতা কেন, পৌরাণিক দেবদেবী সম্বন্ধেও আমাদের মনের এইরূপ দুই বিরোধী ভাব আছে— তাহারা পরস্পর পরস্পরকে দূরীকৃত করিতে পারে না। আমাদের দেবতাদের সম্বন্ধে ষে সকল শাস্ত্রকাহিনী ও জনপ্রবাদ প্রচলিত আছে তাহা আমাদের ধর্মবুদ্ধির উচ্চ আদর্শ-সংগত নহে; এমন কি, আমাদের সাহিত্যে, আমাদের সংগীতে সেই সকল দেবকুৎসার উল্লেখ করিয়া বিস্তর তিরস্কার ও পরিহাসও আছে— কিন্তু ব্যঙ্গ ও ভৎর্সনা করি বলিয়া যে ভক্তি করি না তাহা নহে। গাভীকে জন্তু বলিয়া জানি, তাহার বুদ্ধিবিবেচনার প্রতিও কটাক্ষপাত করিয়া থাকি, খেতের মধ্যে প্রবেশ করিলে লাঠি হাতে তাহাকে তাড়াও করি, গোয়ালঘরে তাহাকে একহাঁটু গোময়পঙ্কের মধ্যে দাঁড় করাইয়া রাখি; কিন্তু ভগবতী বলিয়া ভক্তি করিবার সময় সে সব কথা মনেও উদয় হয় না।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘আবার দেখো, আমরা চিরকাল বেসুরো লোককে গাধার সহিত তুলনা করিয়া আসিতেছি, অথচ বলিতেছি গাধাই আমাদিগকে প্রথম সুর ধরাইয়া দিয়াছে। যখন এটা বলি তখন ওটা মনে আনি না, যখন ওটা বলি তখন এটা মনে আনি না। ইহা আমাদের একটা বিশেষ ক্ষমতা সন্দেহ নাই, কিন্তু এই বিশেষ ক্ষমতা-বশতঃ ব্যোম যে সুবিধার উল্লেখ করিতেছেন আমি তাহাকে সুবিধা মনে করি না। কাল্পনিক সৃষ্টি বিস্তার করিতে পারি বলিয়া অর্থলাভ জ্ঞানলাভ এবং

১৩২