পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



সৌন্দর্য সম্বন্ধে সন্তোষ

সৌন্দর্যভোগ সম্বন্ধে আমাদের একটা ঔদাসীন্যজড়িত সস্তোষের ভাব আছে। আমাদের বিশেষ কিছু আবশ্যক নাই। যুরোপীয়েরা তাঁহাদের বৈজ্ঞানিক অনুমানকে কঠিন প্রমাণের দ্বারা সহস্র বার করিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখেন, তথাপি তাঁহাদের সন্দেহ মিটিতে চায় না; আমরা মনের মধ্যে যদি বেশ একটা সুসংগত এবং সুগঠিত মত খাড়া করিতে পারি তবে তাহার সুসংগতি এবং সুষমাই আমাদের নিকট সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ বলিয়া গণ্য হয়, তাহাকে বহির্জগতে পরীক্ষা করিয়া দেখা বাহুল্য বোধ করি। জ্ঞানবৃত্তি সম্বন্ধে যেমন হৃদয়বৃত্তি সম্বন্ধে সেইরূপ। আমরা সৌন্দর্যরসের চর্চা করিতে চাই, কিন্তু সে জন্য অতি যত্ন-সহকারে মনের আদর্শকে বাহিরে মূতিমান করিয়া তোলা আবশ্বক বোধ করি না— যেমন-তেমন একটা-কিছু হইলেই সন্তুষ্ট থাকি। এমন কি, আলংকারিক অত্যুক্তি অনুসরণ করিয়া একটা বিকৃত মূর্তি থাড়া করিয়া তুলি এবং সেই অসংগত বিরূপ বিসদৃশ ব্যাপারকে মনে মনে আপন ইচ্ছা-মতো ভাবে পরিণত করিয়া তাহাতেই পরিতৃপ্ত হই। আপন দেবতাকে, আপন সৌন্দর্যের আদর্শকে প্রকৃতরূপে সুন্দর করিয়া তুলিবার চেষ্টা করি না। ভক্তিরসের চর্চা করিতে চাই, কিন্তু যথার্থ ভক্তির পাত্র অন্বেষণ করিবার কোনো আবশ্যকতা বোধ করি না— অপাত্রে ভক্তি করিয়াও আমরা সস্তোষে থাকি। সেই জন্য আমরা বলি গুরুদেব আমাদের পূজনীয়; এ কথা বলি না যে যিনি পূজনীয় তিনি আমাদের শুরু। হয়তো গুরু আমার কানে যে মন্ত্র দিয়াছেন তাহার অর্থ তিনি কিছুই বুঝেন না, হয়তো গুরুঠাকুর আমার মিথ্যা মোকদ্দমায় প্রধান মিথ্যাসাক্ষী, তথাপি তাঁহার পদধূলি আমার শিরোধার্য— এরূপ মত গ্রহণ করিলে ভক্তির জন্য ভক্তিভাজনকে খুঁজিতে হয় না, দিব্য আরামে ভক্তি করা যায়।’

 সমীর কহিল, ‘ইংরাজি শিক্ষার প্রভাবে আমাদের মধ্যে ইহার

১৩৩