পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সৌন্দর্যের সম্বন্ধ

সে টাকা সে দিন গণনা করিবার নিয়ম নাই। অর্থাৎ খাজনা-দেনাপাওনা যেন কেবলমাত্র স্বেচ্ছাকৃত একটা আনন্দের কাজ। ইহার মধ্যে এক দিকে নীচ লোভ, অপর দিকে হীন ভয় নাই। প্রকৃতিতে তরুলতা যেমন আনন্দ-মহোৎসবে বসস্তকে পুষ্পাঞ্জলি দেয় এবং বসন্ত তাহা সঞ্চয়-ইচ্ছায় গণনা করিয়া লয় না, সেইরূপ ভাবটা আর কি?

 দীপ্তি কহিল, ‘কাজটা তো খাজনা আদায়, তাহার মধ্যে আবার বাজনা-বাদ্য কেন।”

 ক্ষিতি কহিল, ‘ছাগশিশুকে যখন বলিদান দিতে লইয়া যায় তখন কি তাহাকে মালা পরাইয়া বা জনা বাজায় না। আজ খাজনা-দেবীর নিকটে বলিদানের বাদ্য বাজিতেছে।'

 আমি কহিলাম, সে হিসাবে দেখিতে পার বটে, কিন্তু বলি যদি দিতেই হয় তবে নিতান্ত পশুর মতে। পশুহত্য। না করিয়া উহার মধ্যে যতটা পারা যায় উচ্চভাব রাখাই ভালো।’

 ক্ষিতি কহিল, “আমি তো বলি যেটার যাহা সত্য ভাব তাহাই রক্ষা করা ভালো; অনেক সময়ে নীচ কাজের মধ্যে উচ্চ ভাব আরোপ করিয়া উচ্চ ভাবকে নীচ করা হয়।”

 আমি কহিলাম, ‘ভাবের সত্যমিথ্যা অনেকটা ভাবনার উপরে নির্ভর করে। আমি এক ভাবে এই বর্ষার পরিপূর্ণ নদীটিকে দেখিতেছি, আর ঐ জেলে আর এক ভাবে দেখিতেছে; আমার ভাব যে এক চুল মিথ্যা এ কথা আমি স্বীকার করিতে পারি না।'

 সমীর কহিল, ‘অনেকের কাছে ভাবের সত্যমিথ্যা ওজন-দরে পরিমাপ হয়। যেটা যে পরিমাণে মোটা সেটা সেই পরিমাণে সত্য। সৌন্দর্যের অপেক্ষা ধূলি সত্য, স্নেহের অপেক্ষা স্বার্থ সত্য, প্রেমের অপেক্ষা ক্ষুধা সত্য।’

 আমি কহিলাম, কিন্তু তবু চিরকাল মানুষ এই সমস্ত ওজনে-ভারি

১৫