পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লিগ্রামে

বৃহৎ স্তূপের মধ্যে অনেক ঝরিয়া গিয়া, পরিপাক প্রাপ্ত হইয়া, একখানি সমগ্র সুন্দর সভ্যতা দাঁড়াইয়া যাইবে। ক্ষুদ্র পরিণামের মধ্যে পরিসমাপ্তি লাভ করিয়া সস্তুষ্ট ভাবে থাকার মধ্যে একটি শান্তি সৌন্দর্য ও নির্ভয়তা আছে সন্দেহ নাই— আর, যাহারা মনুষ্যপ্রকৃতিকে ক্ষুদ্র ঐক্য হইতে মুক্তি দিয়া বিপুল বিস্তারের দিকে লইয়া যায় তাহারা অনেক অশান্তি, অনেক বিঘ্নবিপদ সহ্য করে; বিপ্লবের রণক্ষেত্রের মধ্যে তাহাদিগকে অশ্রান্ত সংগ্রাম করিতে হয; কিন্তু তাহারাই পৃথিবীর মধ্যে বীর এবং তাহারা যুদ্ধে পতিত হইলেও অক্ষয় স্বর্গ লাভ করে। এই বীর্য এবং সৌন্দর্যের মিলনেই যথার্থ সম্পূর্ণতা। উভয়ের বিচ্ছেদে অর্ধসভ্যতা। তথাপি আমরা সাহস করিয়া ইউরোপকে অর্ধসভ্য বলি না, বলিলেও কাহারও গায়ে বাজে না। ইউরোপ আমাদিগকে অর্ধসভ্য বলে; এবং বলিলে আমাদের গায়ে বাজে, কারণ, সে আমাদের কর্ণধার হইয়া বসিয়াছে।

 আমি এই পল্লীপ্রান্তে বসিয়া আমার সাদাসিধা তানপুরার চারটি তারের গুটিচারেক স্বন্দর সুরসম্মিশ্রণের সহিত মিলাইয়া ইউরোপীয় সভ্যতাকে বলিতেছি ‘তোমার সুর এখনো ঠিক মিলিল না’, এবং তানপুরাটিকেও বলিতে হয়, ‘তোমার ঐ গুটিকয়েক সুরের পুনঃপুনঃ ঝংকারকেও পরিপূর্ণ সংগীত জ্ঞান করিয়া সস্তুষ্ট হওয়া যায় না। বরঞ্চ আজিকার ঐ বিচিত্র বিশৃঙ্খল স্বরসমষ্টি কাল প্রতিভার প্রভাবে মহাসংগীতে পরিণত হইয়া উঠিতে পারে; কিন্তু হায়, তোমার ঐ কয়েকটি তারের মধ্য হইতে মহৎ মূর্তিমান সংগীত বাহির করা প্রতিভার পক্ষেও দুঃসাধ্য।’

৫১