পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অখণ্ডতা

সকল কাজেই হস্তক্ষেপ করে। সে যেন এক জন বাহিরের লোক ঘরের হইয়া পড়িয়াছে— তাহাকে ত্যাগ করাও কঠিন, তাহাকে ভালোবাসাও দুঃসাধ্য।

 ‘সে যেন অনেকটা বাঙালির দেশে ইংরাজের গবর্মেণ্টের মতো। আমাদের সরল দিশি রকমের ভাব, আর তাহার জটিল বিদেশী রকমের আইন। উপকার করে, কিন্তু আত্মীয় মনে করে না। সেও আমাদের বুঝিতে পারে না, আমরাও তাহাকে বুঝিতে পারি না। আমাদের যে সকল স্বাভাবিক সহজ ক্ষমতা ছিল তাহার শিক্ষায় সেগুলি নষ্ট হইয়া গেছে, এখন উঠিতে বসিতে তাহার সাহায্য ব্যতীত আর চলে না।

 ‘ইংরাজের সহিত আমাদের মনের আরো কতকগুলি মিল আছে। এত কাল সে আমাদের মধ্যে বাস করিতেছে তবু সে বাসিন্দা হইল না, তবু সে সর্বদা উড়ু-উড়ু করে। যেন কোনো সুযোগে একটা ফর্লো পাইলেই, মহাসমুদ্রপারে তাহার জন্মভূমিতে পাড়ি দিতে পারিলেই বাঁচে। সব চেয়ে আশ্চর্য সাদৃশ্য এই যে, তুমি যতই তাহার কাছে নরম হইবে, যতই ‘যো হুজুর খোদাবন্দ্‌’ বলিয়া হাত জোড় করিবে ততই তাহার প্রতাপ বাড়িয়া উঠিবে; আর তুমি যদি ফস্‌ করিয়া হাতের আস্তিন গুটাইয়া ঘুষি উঁঁচাইতে পার, খৃস্টান শাস্ত্রের অনুশাসন অগ্রাহ্য করিয়া চড়টির পরিবর্তে চাপড়টি প্রয়োগ করিতে পার, তবে সে জল হইয়া যাইবে।

 ‘মনের উপর আমাদের বিদ্বেষ এতই সুগভীর যে, যে কাজে তাহার হাত কম দেখা যায় তাহাকেই আমরা সব চেয়ে অধিক প্রশংসা করি। নীতিগ্রন্থে হঠকারিতার নিন্দা আছে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহার প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরাগ দেখিতে পাই। যে ব্যক্তি অত্যন্ত বিবেচনাপূর্বক অগ্রপশ্চাৎ ভাবিয়া অতিসতর্ক ভাবে কাজ করে, তাহাকে

৭২