পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অখণ্ডতা

তৎক্ষণাৎ তাহা কিছুই বুঝা যায় না; এবং মানুষ নিজের সংশয়তিমিরাচ্ছন্ন ক্ষুদ্র গহ্বর হইতে বাহির হইয়া পতঙ্গের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে তাহাদের মহত্ত্বশিখার মধ্যে আত্মঘাতী হইয়া ঝাঁপ দেয়।

 ‘রমণীও প্রকৃতির মতো। মন আসিয়া তাহাকে মাঝখান হইতে দুই ভাগ করিয়া দেয় নাই। সে পুষ্পের মতো আগাগোড়া একখানি। এই জন্য তাহার গতিবিধি আচার-ব্যবহার এমন সহজসম্পূর্ণ। এই জন্য দ্বিধান্দোলিত পুরুষের পক্ষে রমণী ‘মরণং ধ্রুবং’।

 ‘প্রকৃতির ন্যায় রমণীরও কেবল ইচ্ছাশক্তি,তাহার মধ্যে যুক্তিতর্ক বিচারআলোচনা কেন কী-বৃত্তান্ত নাই। কখনো সে চারি হস্তে অল্প বিতরণ করে, কখনো সে প্রলয়মূর্তিতে সংহার করিতে উদ্যত হয়। ভক্তে্রা করজোড়ে বলে, ‘তুমি মহামায়া, তুমি ইচ্ছাময়ী, তুমি প্রকৃতি, তুমি শক্তি।’


 সমীর হাঁঁপ ছাড়িবার জন্য একটু থামিবামাত্র ক্ষিতি গম্ভীর মুখ করিয়া কহিল, ‘বাঃ! চমৎকার! কিন্তু তোমার গা ছুঁইয়া বলিতেছি, এক বর্ণ যদি বুঝিয়া থাকি! বোধ করি তুমি যাহাকে মন ও বুদ্ধি বলিতেছ প্রকৃতির মতো আমার মধ্যেও সে জিনিসটার অভাব আছে, কিন্তু তৎপরিবর্তে প্রতিভার জন্যও কাহারও নিকট হইতে প্রশংসা পাই নাই এবং আকর্ষণশক্তি ও যে অধিক আছে, তাহার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় না।’

 দীপ্তি সমীরকে কহিল, ‘তুমি যে মুসল্‌মানের মতো কথা কহিলে, তাহাদের শাস্ত্রেই তো বলে মেয়েদের আত্মা নাই।’

 স্রোতস্বিনী চিন্তান্বিত ভাবে কহিল, ‘মন এবং বুদ্ধি শব্দটা যদি তুমি একই অর্থে ব্যবহার কর আর যদি বল, আমরা তাহা হইতে বঞ্চিত, তবে তোমার সহিত আমার মতের মিল হইল না।’

৭৫