পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অখণ্ডতা

 অতঃপর ব্যোম সমীরের মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, ‘তার পরে? তোমার লেখাটা শেষ করিয়া ফেলো।’

 সমীর কহিল, ‘আর আবশ্যক কী। আমি যাহা আরম্ভ করিয়াছি তুমি তো তাহার এক প্রকার উপসংহার করিয়া দিয়াছ।’

 ক্ষিতি কহিল, ‘কবিরাজ মহাশয় শুরু করিয়াছিলেন, ডাক্তার মহাশয় সাঙ্গ করিয়া গেলেন, এখন আমরা হরি হরি বলিয়া বিদায় হই। মন কী, বুদ্ধি কী, আত্ম কী, সৌন্দর্য কী এবং প্রতিভাই বা কাহাকে বলে, এ সকল তত্ত্ব কস্মিন্‌ কালে বুঝি নাই কিন্তু বুঝিবার আশা ছিল; আজ সেটুকুও জলাঞ্জলি দিয়া গেলাম।’

 পশমের গুটিতে জটা পাকাইয়া গেলে যেমন নতমুখে সতর্ক অঙ্গুলিতে ধীরে ধীরে খুলিতে হয়, স্রোতস্বিনী চুপ করিয়া বসিয়া যেন তেমনি ভাবে মনে মনে কথাগুলিকে বহু যত্নে ছাড়াইতে লাগিল।

 দীপ্তিও মৌনভাবে ছিল; সমীর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘কী ভাবিতেছ।’

 দীপ্তি কহিল, ‘বাঙালির মেয়েদের প্রতিভাবলে বাঙালির ছেলেদের মতো এমন অপরূপ সৃষ্টি কী করিয়া হইল তাই ভাবিতেছি।’

 আমি কহিলাম, ‘মাটির গুণে সকল সময়ে শিব গড়িতে কৃতকার্য হওয়া যায় না।’

৮০