পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গদ্য ও পদ্য

দেন। দেহমনের সর্বপ্রকার গতিরোধ করাই যোগসাধন।’

 সমীর ব্যোমের পৃষ্ঠে হাত দিয়া সহাস্য কহিলেন, ‘একটা মানুষ যখন একটা প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছে, তখন মাঝখানে তাহার গতিরোধ করার নাম গোলযোগ-সাধন।’

{{gap}আমি কহিলাম, ‘বৈজ্ঞানিক ক্ষিতির নিকট অবিদিত নাই যে, গতির সহিত গতির, এক কম্পনের সহিত অন্য কম্পনের ভারি একটা কুটুম্বিতা আছে। সা সুরের তার বাজিয়া উঠিলে মা সুরের তার কাঁপিয়া উঠে। আলোকতরঙ্গ উত্তাপতরঙ্গ ধ্বনিতরঙ্গ স্বায়ুতরঙ্গ প্রভৃতি সকল প্রকার তরঙ্গের মধ্যে এইরূপ একটা আত্মীয়তার বন্ধন আছে। আমাদের চেতনাও একটা তরঙ্গিত কম্পিত অবস্থা। এই জন্য বিশ্বসংসারের বিচিত্র কম্পনের সহিত তাহার যোগ আছে। ধ্বনি আসিয়া তাহার স্বায়ুদোলায় দোল দিয়া যায়, আলোকরশ্মি আসিয়া তাহার স্বায়ুতন্ত্রীতে অলৌকিক অঙ্গুলি আঘাত করে। তাহার চিরকম্পিত স্নায়ুজাল তাহাকে জগতের সমুদায় স্পন্দনের ছন্দে নানা সূত্রে বাঁধিয়া জাগ্রত করিয়া রাখিয়াছে।

 ‘হৃদয়ের বৃত্তি, ইংরাজিতে যাহাকে ইমোশন বলে, তাহা আমাদের হৃদয়ের আবেগ, অর্থাৎ গতি; তাহার সহিতও অন্যান্য বিশ্বকম্পনের একটা মহা ঐক্য আছে। আলোকের সহিত, বর্ণের সহিত, ধ্বনির সহিত তাহার একটা স্পন্দনের যোগ, একটা সুরের মিল আছে।

 ‘এই জন্য সংগীত এমন অব্যবহিত ভাবে আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করিতে পারে, উভয়ের মধ্যে মিলন হইতে অধিক বিলম্ব হয় না। ঝড়ে এবং সমুদ্রে যেমন মাতামাতি হয়, গানে এবং প্রাণে তেমনি একটি নিবিড় সংঘর্ষ হইতে থাকে।

 ‘কারণ, সংগীত আপনার কম্পন সঞ্চার করিয়া আমাদের সমস্ত

৮৯