পাতা:পত্রপুট-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পত্রপুট
২৯

রাস্তায়-চলা ব্যস্ত যে পৃথিবী
এখন আঙিনায় আঁচল-মেলা তার স্তব্ধ রূপ।
লক্ষ্য নেই কাছের সংসারে,
শুনছে তারার আলোয় গুঞ্জরিত পুরাণ কথা।
মনে পড়ছে দূর বাষ্পযুগের শৈশবস্মৃতি।
গাছগুলো স্তম্ভিত,
রাত্রির নিঃশব্দতা পুঞ্জিত যেন দেহ নিয়ে।
ঘাসের অস্পষ্ট সবুজে সারি সারি পড়েছে ছায়া।
দিনের বেলায় জীবনযাত্রার পথের ধারে
সেই ছায়াগুলি ছিল সেবাসহচরী;
তখন রাখালকে দিয়েছে আশ্রয়,
মধ্যাহ্নের তীব্রতায় দিয়েছে শান্তি।
এখন তাদের কোনো দায় নেই জ্যোৎস্নারাতে;
রাত্রের আলোর গায়ে গায়ে বসেছে ওরা,
ভাইবোনে মিলে বুলিয়েছে তুলি
খামখেয়ালী রচনার কাজে।
আমার দিনের বেলাকার মন
আপন সেতারের পর্দা দিয়েছে বদল ক’রে।
যেন চলে গেলেম পৃথিবীর কোনো প্রতিবেশী গৃহে,
তাকে দেখা যায় দুরবীনে।
যে গভীর অনুভূতিতে নিবিড় হোলো চিত্ত
সমস্ত সৃষ্টির অন্তরে তাকে দিয়েছি বিস্তীর্ণ ক’রে।
ঐ চাঁদ ঐ তারা ঐ তমঃপুঞ্জগাছগুলি
এক হোলো, বিরাট হোলো, সম্পূর্ণ হোলো
আমার চেতনায়।