পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিতে চাহেন। আমাকে আমারই স্বার্থে এই দুঃখকষ্ট হইতে বাচাইবার জন্য তাঁহার ইচ্ছার মধ্যে যে স্নেহ উদ্বেল হইয়া উঠিয়াছে তাহার মূল্য বুঝিব না এমন হৃদয়হীন আমি নহি। তাঁহার স্বভাবতই আশঙ্কা হয় বুঝিবা আমি তরুণ-সুলভ উত্তেজনার ঝোঁকের মাথায় কিছু একটা করিয়া বসিব। কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস এই ত্যাগ কাহাকে না কাহাকেও করিতেই হইবে।

 যদি অন্য কেহ অগ্রসর হইত, তবে আমার পিছপা হইবার, অন্ততঃ আরও খানিকটা ভাবিয়া দেখিবার কারণ বুঝিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে লক্ষণ মােটেই দেখা যাইতেছে না, অথচ অমূল্য সময় বহিয়া যাইতেছে। সমস্ত আলােড়ন সত্ত্বেও এটকু ঠিক যে এখন পর্য্যন্ত একজন সিভিলিয়ানও চাকুরিতে ইস্তফা দিয়া আন্দোলনে নামিতে সাহস করে নাই। ভারতবর্ষের সম্মুখে যুদ্ধের আহ্বান আসিয়াছে —অথচ কেহ তাহার সমুচিত জবাব দেয় নাই। আরও অগ্রসর হইয়া বলিতে পারি সমগ্র বৃটিশ ভারতের ইতিহাসে একজনও ভারতীয় স্বেচ্ছায় দেশ সেবার জন্য সিভিল সার্ভিস ত্যাগ করে নাই। দেশের সর্বোচ্চ কর্ম্মচারীদের নিম্নতর শ্রেণীর লােকেদের নিকট দৃষ্টান্ত স্থাপন করার সময় আসিয়াছে। সরকারী উচ্চ চাকুরিয়ারা যদি বশ্যতার প্রতিজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এমন কি তাহার ইচ্ছাটুকুও প্রকাশ করেন তাহা হইলেই আমলাতন্ত্রের যন্ত্র ধসিয়া পড়ে।

 সুতরাং এই ত্যাগ হইতে নিজেকে রক্ষা করিবার কোনও পথ দেখিতে পাইতেছি না। এই ত্যাগের অর্থ আমি ভালরূপে জানি। দারিদ্র্য, দুঃখ, ক্লেশ, কঠিন পরিশ্রম ত আছেই, আরও নানা ভােগ আছে যাহার কথা স্পষ্টভাবে বলিবার প্রয়ােজন নাই, কিন্তু আপনার পক্ষে বুঝিয়া লওয়া সহজ। কিন্তু এ ত্যাগ করিতেই হইবে, জানিয়া শুনিয়া বুঝিয়া করিতে হইবে। দেশে ফিরিয়া পদত্যাগ করিবার যে পরামর্শ আপনি দিয়াছেন তাহা অতি যুক্তিসঙ্গত হইলেও তাহার বিরুদ্ধে দুই একটি কথা বলিবার আছে। প্রথমতঃ গােলামির প্রতীক

১১৩