পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিবর্ত্তন করিয়াছি শুনিয়া তিনি নাকি আশ্চর্য্য এমন কি হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিলেন, কারণ তিনি এ পর্য্যন্ত কোন ভারতীয়কে এরূপ করিতে দেখেন নাই। আমি তাঁহাকে বলি যে পরে আমি সাংবাদিকতাকেই আশ্রয় করিব। তাঁহার মতে সাংবাদিক-জীবন একঘেয়ে সিভিল সার্ভিস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

 এখানে আসিবার পূর্ব্বে আমি তিন সপ্তাহ অক্সফোর্ডে ছিলাম এবং সেইখানেই আমি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। শেষ কয় মাস যে চিন্তায় আমাকে অহরহ পীড়া করিয়াছে তাহা শুধু এই যে বহু ব্যক্তির বিশেষ করিয়া বাবা ও মার দুঃখ ও ক্লেশ হয় সেরূপ কার্য্য নীতিগতভাবে আমার করা উচিত কিনা।•••সুতরাং নূতন পথের কিনারায় দাঁড়াইয়া আজ আমাকে বাবা-মার সুস্পষ্ট ইচ্ছা ও আপনার উপদেশের বিরোধিতা করিতে হইতেছে—অবশ্য আপনি যে কোনও পথে আমি চলি না কেন আপনার “সাদর অভিনন্দন” জানাইয়া রাখিয়াছেন। সার্ভিসে যোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে আমার প্রধানতম যুক্তির ভিত্তি এই ছিল যে প্রতিজ্ঞাপত্রে সহি করিয়া আমাকে এমন এক বৈদেশিক আমলাতন্ত্রের বশ্যতা স্বীকার করিতে হইবে যাহার এদেশে থাকিবার নৈতিক অধিকার আমি বিন্দুমাত্র স্বীকার করি না। একবার প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিলে আমি তিন বৎসর অথবা তিন দিন কাজ করি তাহাতে কিছু আসে যায় না। আমি বুঝিয়াছি যে আপোষহীন বস্তু—ইহাতে মানুষের অধঃপতন এবং আদর্শের হানি হয়।••• সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যে জীবনান্তে সরকারী উপাধির মুকুট পরিয়া মন্ত্রিত্বের গদিতে আসীন হইতেছেন তাহার কারণ তিনি এড্‌মণ্ড বার্ক বর্ণিত সুবিধাবাদের দর্শনে বিশ্বাসী। সুবিধাবাদীর নীতি গ্রহণ করিবার মত অবস্থা আমাদের এখনও আসে নাই। আমাদের এক জাতি গঠন করিতে হইবে এবং হ্যাম্পডেন ও ক্রমওয়েলের আপোষহীন আদর্শবাদ ভিন্ন তাহা সম্ভব নহে।••• আমার এই বিশ্বাস জন্মিয়াছে যে বৃটিশ

১১৬