পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমাদের এই বিশাল সংসার তাঁর অঙ্গুলি চালনায় চলে। খাওয়াপরার জন্য তাঁকে আমরা দায়ী করি এবং খাওয়া খারাপ হলে তাঁকে গালাগালি দিতে ছাড়ি না। আমাদের এই সংসারের নাম রাখা হয়েছে—অমুক বাবুর হোটেল।

 এখানকার খাওয়াদাওয়া সাধারণতঃ মন্দ নয়—তবে অঙ্গ কয়েকদিন হ’ল খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার নিয়ে কর্ত্তৃপক্ষের সঙ্গে গোল বেঁধেছে। ব্যাপারটা কতদূর গড়াবে তা এখন বুঝতে পারছি না। বাঙ্গালীর মিষ্টান্ন বাদে এখানে জিনিষপত্র মন্দ পাওয়া যায় না—তবে জিনিষপত্রের দাম বড় বেশী। ম্যানেজার বাবুর কৃপায় এখানে আমাদের উঠানের এককোণে মুরগীশালা খোলা হয়েছে—সেই ঘরের মধ্যে কতকগুলি মোরগ ও মুরগী স্থান পেয়েছে। সকাল সন্ধ্যা এই সব পক্ষবিশিষ্ট জীবের “কক্কর কোঁ” শব্দে আমি অস্থির হয়ে উঠি——কিন্তু এই মধুর রব না শুনলে ম্যানেজার বাবুর নাকি ঘুম হয় না।

 উঠানের মধ্যে একটা ছোট পুখুর আছে। তাতে আমাদের নাক পর্য্যন্ত জল ধরে। সেই পুকুরের জল পরিষ্কার থাকলে আমরা লম্ফঝম্ফ করে, একটু সাঁতার কাটবার চেষ্টা করি। অবশ্য যেখানে ডোববার ভয় নাই—সেখানে সাঁতার ভাল হয় না। কিন্তু আমি গোড়ায় বলেছি মধুর অভাবে লোকে গুড় খায়—আমরাও নদীর অভাবে বড় চৌবাচ্চায় সাঁতার দিয়ে মনকে প্রবোধ দিই।

 ম্যানেজার বাবুর চেষ্টায় এই উঠানের মধ্যে কতকগুলি ফুলের গাছ লাগান হয়েছে। তবে তার মধ্যে গন্ধহীন সূর্য্যমুখী ফুলই বেশী, এ রাজ্যে সুগন্ধি ফুল পাওয়া সহজ নয়। জানি না এটা দেশের গুণ কি জেলের গুণ। জেলের মধ্যে যে সব রজনীগন্ধা ফুল ফোটে সেগুলোর সুগন্ধি নাই বলে মনে হয়।

 আমার কাহিনী আজ এখানেই অসমাপ্ত রাখতে হবে—তা না হলে এ সপ্তাহের ডাক যাবে না। কাহিনী সকলকে পড়ে শোনাবেন, মেজদাদাকেও। আমি প্রত্যেক সপ্তাহে বাড়ীতে পত্র দিই। যদি

১৫৭