পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 লোকমান্য যে ওয়ার্ডে বাস করিতেন উহা এখনও আছে; তবে উহাকে নব পরিকল্পনায় আরও বড় করা হইয়াছে। আমাদের ওয়ার্ডের মতই কাঠের বেড়া দ্বারা ইহা এমনভাবে তৈরী যে, গ্রীষ্মকালে তাপ ও রৌদ্র, বর্ষাকালে বৃষ্টি, শীতকালে শীত—এমন কি সারা বৎসর ধরিয়া যে ধূলার ঝড় বহে উহা হইতে আত্মরক্ষার কোনও উপায়ই নাই। এখানে আসিবার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই ওয়ার্ডটি আমাকে দেখানো হইয়াছিল। ভারতবর্ষ হইতে আমার এই নির্ব্বাসনকে খুশী মনে গ্রহণ করিতে পারি নাই; তবু আমি ঈশ্বরকে এজন্য ধন্যবাদ জানাইয়াছিলাম যে, স্বদেশ ও স্বগৃহ হইতে মান্দালয়ে এই বাধ্যতামূলক নির্ব্বাসনের ফলে স্মৃতির ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হইয়া উঠিবে যাহা আমার পক্ষে সান্ত্বনা ও প্রেরণাস্বরূপ হইবে। অন্যান্য জেলের মত এই জেলও নোংরা, একঘেয়ে ও বৈচিত্রহীন; তবু ইহা আমার কাছে এক পবিত্র তীর্থভূমি। কারণ এখানে ভারতবর্ষের এক শ্রেষ্ঠ সন্তান একাদিক্রমে ছয় বৎসর কারাবাস করিয়া গিয়াছেন।

 লোকমান্যের এই ছয় বৎসরব্যাপী কারাবাসের কথা আমরা সকলেই জানি কিন্তু যে দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়া তাঁহার দিনগুলি অতিবাহিত হইয়াছিল সে খবর আমরা খুব কমসংখ্যক লোকই রাখি একথা আমি জোর করিয়া বলিতে পারি। ভাবের আদানপ্রদান চলিতে পারে এমন কোন সঙ্গী তাঁহার ছিল না—ফলে তাঁহাকে একেবারে নিঃসঙ্গ অবস্থায় দিন কাটাইতে হইত। এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ যে, তাঁহাকে আর কোনও বন্দীর সঙ্গে মেলামেশা পর্য্যন্ত করিতে দেওয়া হইত না। বই-ই ছিল তাঁহার একমাত্র সঙ্গী এবং একাকী একটি ঘরে তাঁহাকে বাস করিতে হইত। এখানে অবস্থানকালে তাঁহাকে দুই তিনবারের বেশী কাহারও সহিত সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয় নাই। এমন কি যে কয়বার তাঁহাকে অনুমতি দেওয়া হইয়াছিল তাহাতেও পুলিস ও জেল কর্ত্তৃপক্ষ সম্মুখে

১৬৫