পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বার বার আমি গভীরভাবে চিন্তা করিয়াছি যে, কি অবস্থার মধ্যে লোকমান্য তাঁহার মূল্যবান জীবনের দীর্ঘ ছয় বৎসর কাল অতিবাহিত করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এবং বার বার নিজেকে প্রশ্ন করিয়াছি,—“যদি যুবক বন্দীদেরই এরূপ কষ্ট ভোগ করিতে হয় তাহা হইলে লোকমান্যের মত একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে তাঁহার সময়ে কত বেশী কষ্টই না সহ্য করিতে হইয়াছে যাহা তাঁহার দেশবাসীর নিকট অজ্ঞাত ছিল।” ঈশ্বর এই পৃথিবীর স্রষ্টা কিন্তু জেলগুলি মানুষ তৈরী করিয়াছে। ইহা এক পৃথক জগৎ এবং সভ্য সমাজের ধ্যান-ধারণার দ্বারা ইহা চালিত হয় না। আত্মার মৃত্যু ঘটাইয়া এই বন্দীজীবনের সহিত মানাইয়া চলা সহজ ব্যাপার নয়। পুরনো অভ্যাস সমস্তই ত্যাগ করিতে হইবে—অথচ স্বাস্থ্য ও শক্তিও নষ্ট করা চলিবে না; জেলের আইন-কানুন মানিয়া চলিতে হইবে আবার হার স্বীকার না করিয়া মনের প্রফুল্লতা ও শান্তিটুকুও বজায় রাখিতে হইবে। এই যন্ত্রণা ও পরাধীনতার মধ্যেও কারাবাসের অমানুষিক প্রতিক্রিয়া তুচ্ছ করা এবং মানসিক স্থৈর্যয় বজায় রাখিয়া গীতা-ভাষ্যের মত একটি বিরাট যুগসৃষ্টিকারী পুস্তক রচনা করা—এ শুধু লোকমান্যের মত অসাধারণ ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন একজন দার্শনিকের পক্ষেই সম্ভব।

 যদি কেহ জানিতে ইচ্ছুক হন যে, এরূপ প্রতিকূল, ক্লান্তিকর ও নিরুৎসাহব্যঞ্জক পরিস্থিতির মধ্যেও লোকমান্যের গীতা-ভাষ্যের মত একটি বিরাট ও মহৎ গ্রন্থ রচনা করিতে হইলে পাণ্ডিত্য ছাড়াও কি পরিমাণ ইচ্ছাশক্তি, গভীর সাধনা ও সহনশীলতার প্রয়োজন তাহা হইলে তাহার কিছুদিন জেলে বাস করা উচিত। আমি আমার নিজের কথা বলিতে পারি, এ বিষয়ে যতই আমি চিন্তা করি ততই শ্রদ্ধায় ও ভক্তিতে অভিভূত হইয়া যাই। আশা করি দেশবাসী লোকমান্যের মহত্ত্বের পরিমাপ করিবার কালে এ সকল বিষয় মনে রাখিবেন। তিনি বহুমূত্রের রোগী হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘকালব্যাপী

১৬৭