পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কারণ নাই। তবে ব’লে মনকে বোঝান যায় যে পুখুরে স্নান করেছি।

 এখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আশা করি এখানেই মায়ের পূজা করতে পারব। তবে খবচ নিয়ে কর্ত্তৃপক্ষদের সহিত ঝগড়া চলছে, দেখা যাক কি হয়। পূজার কাপড় এখানে পাঠাতে যেন ভুল না হয়—বিজয়া দশমী যখন এখানেই কাটবে।

 আমাদের হোটেলে সবই পাওয়া যায়। সেদিন ম্যানেজার বাবু আমাদের গরম গরম জিলিপী খাওয়ালেন—আর আমরাও দুহাত তুলে আশীর্ব্বাদ করলাম তিনি যেন চিরকাল জেলেই থাকেন। তার পূর্ব্বে রসগোল্লা খাইয়েছিলেন যদিও গোল্লা রসে ভাসছিল তবুও ভিতরে রস ছিল না এবং ছুঁড়ে মারলে রগ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আমরা সেই লৌহবৎ রসগোল্লা নিশ্চিন্তমনে গলাধঃকরণ করে কৃতজ্ঞ চিত্তে ম্যানেজার বাবুর দীর্ঘায়ু কামনা করেছিলাম।

 আমরা যখন বাঙ্গালী তখন বাঙ্গালী রকমের রান্না নিশ্চয় হয়। ম্যানেজার বাবু স্থির করেছেন যে জগতে একমাত্র পেঁপেই সত্য—তাই ঝোলে, ঝালে, অম্বলে, তরকারীতে, ডালনায়—সর্ব্বত্র পেঁপে পাওয়া যায়। আর যেহেতু আমাদের ম্যানেজার বাবু half-doctor অর্থাৎ আধা-ডাক্তার—তিনি তাই সিদ্ধান্ত করেছেন যে বেশী পরিমাণে পেঁপে ভক্ষণ করলে পেটের অবস্থা ভাল থাকবে। চলতি কথায় বলে—“খাওয়ার মধ্যে থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়।” এখানে থোড়ও পাই না। আর বড়িও পাই না। তাই বলতে ইচ্ছা করে নিরামিষ রান্নার মধ্যে পেঁপে, বেগুন, শাক, পেঁপে। ভাগ্যিস পাঁঠা ও মুরগীটা খাওয়ার অভ্যাস ছিল তাই ম্যানেজারের গুণগান করতে পারছি—তা না হলে কি হোত, বলা শক্ত।

 এটা কিন্তু না বললে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া হবে যে এর মধ্যে ম্যানেজার বাবু অনেক অনুরোধের ফলে ধোঁকার

১৭৩